দেশজুড়ে

ডিম উদ্ধারের পর ৭২ সাপের বাচ্চা ফোটালেন শহিদুল

পঞ্চগড়ে ডিম থেকে ফোটানো ৭২টি সাপের বাচ্চা নিরাপদ স্থানে অবমুক্ত করা হয়েছে। রোববার (১৪ মে) সন্ধ্যার আগে বোদা উপজেলার ধরধরা এলাকার টাঙ্গন নদীতে জলঢোড়া প্রজাতির সাপের বাচ্চাগুলো অবমুক্ত করা হয়।

১৯ এপ্রিল উপজেলা সদরের লাঙ্গলগাঁও এলাকার দিনেশ চন্দ্র রায়ের বাড়ির শোয়ার ঘরের মেঝের মাটি খনন করে ৭৫টি ডিম উদ্ধার করেন শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। পরে ডিমগুলে তিনি নিজের তত্ত্বাবধানে বিশেষ তাপমাত্রায় পরিচর্যা করে ৭২টি বাচ্চা ফোটান। এর আগেও শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ উদ্ধার করেন এবং ছোটখাট জঙ্গলে তা অবমুক্ত করেন।

স্থানীয়রা জানান, সাপসহ যেকোনো প্রাণীর প্রতি সংবেদশীল শহিদুল ইসলামের বাড়ি বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ এলাকায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যানম রিসার্চ সেন্টার থেকে সাপ ধরায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও উদ্ধারকারী হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাপ দেখা এবং উদ্ধারের খবর পেলেই তিনি নিজ উদ্যোগে ছুটে যান উদ্ধার করতে।

মাস খানেক আগে তিনি সাপ উদ্ধারের জন্য লাঙ্গলগাঁও এলাকার ওই বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে কোনো সাপ না পেয়ে একটি ইঁদুরের গর্তের মতো গর্ত দেখতে পান। পরে সেখানে খনন শুরু করেন। তবে সেখানে কোনো সাপ না পেলেও খননের এক পর্যায়ে গর্ত থেকে ৭৫টি সাপের ডিম উদ্ধার করেন। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং বাতাসের আদ্রতাসহ তার নিবিড় তত্ত্বাবধানে ১৫-২০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে থাকে। এরপর একে একে ৭২টি সাপের বাচ্চা বের হয়। বাচ্চাগুলো নির্বিষ জলঢোড়া প্রজাতির সাপ বলে জানান শহিদুল।

লাঙ্গলগাঁও এলাকার দিনেশ চন্দ্র রায় বলেন, আমার ঘরে সাপ দেখতে পেয়ে ঘরের বিভিন্ন স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। ঘরের আসবাবপত্র সরিয়েও কোনো সাপ দেখতে পাইনি। তবে আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে ঘরে অবশ্যই সাপ রয়েছে। পরে আমরা স্থানীয়ভাবে পরিচিত সাপ উদ্ধাকারী শহিদুল ইসলামকে খবর দিই। তিনি এসে সাপ না পেলেও ঘরের মেঝে খুঁড়ে ৭৫টি সাপের ডিম উদ্ধার করেন।

সাপ উদ্ধারকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, এখন জলঢোড়া সাপের ডিমফুটে বাচ্চা বের হওয়ার উপযুক্ত সময়। সাপের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সাধারণত ৭০ থেকে ৭৫ বাতাসের আদ্রতা প্রয়োজন। এছাড়া ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলে ডিম থেকে এমনিতেই বাচ্চা বের হয়। উদ্ধারকৃত ডিমের মধ্যে মাত্র তিনটি ডিম নষ্ট হয়েছে। অবমুক্ত করা সাপ সম্পূর্ণ নির্বিষ প্রজাতির এবং এগুলো উপকারী সাপ, মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

শ্রষ্ঠার প্রত্যেক সৃষ্টির বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কাজেই আশপাশে এসব সাপ দেখলে কেউ যেন সেগুলো না মারে এবং ডিম পেলে সেগুলোও নষ্ট না করে। ভয় পেলে যে কোনো প্রজাতির সাপ সাধারণত ডিম রেখেই পালিয়ে যায়। এজন্য মা সাপটি পাওয়া যায়নি। তবে কোথাও সাপ দেখলে তাকে অথবা কোনো সাপ উদ্ধারকারীকে খবর দেওয়ার পরামর্শ দেন শহিদুল।

এর আগে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রথমবারের মতো বিরল প্রজাতির রেড কোরাল কুকরি নামে বিলুপ্ত প্রায় একটি প্রজাতির সাপ পাওয়া যায় পঞ্চগড়ে। আহত অবস্থায় সেই সাপটি উদ্ধার করেছিলেন শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য বিষধর এবং নির্বিষ সাপ উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছেন।

সফিকুল আলম/এফএ/এমএস