লিচু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে গতবছরের তুলনায় এবার লিচুর পরিমাণ অর্ধেকেরে কম। বৈরী আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে লিচুর ফলনে। চলমান দাবদাহে বোম্বাই লিচুু পরিপক্ক হওয়ার আগে গাছেই ফেটে যাচ্ছে। দেশি মোজাফ্ফরী জাতের লিচু রোদের তীব্রতায় পুড়ে কালচে হয়ে যাচ্ছে। ৫-৭ দিন ধরে দেশি লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। অপরিপক্কতার কারণে লিচু আকারে ছোট। স্বাদও তেমন নেই।
উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ঈশ্বরদীতে তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিক টন।
ঈশ্বরদীতে সবচেয়ে বেশি লিচু উৎপাদন হয় জয়নগর ও মানিকনগর গ্রামে। জয়নগর গ্রামের লিচুচাষি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার ৫০-৬০টি লিচুগাছ রয়েছে। এরমধ্যে ১০টি গাছের লিচুতে ফাটল দেখা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বোম্বাই লিচু পাকতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। এরমধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। অতীতে কখনো এত বেশি লিচুর ফাটল দেখা দেয়নি। কেন ফাটছে বিষয়টি বুঝতে পারছি না। ফাটল রোধে কী করণীয় তাও জানা নেই।’ জয়নগর গ্রামের খায়রুল বাসার মিঠু বলেন, ‘এ উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফল ফসল লিচু। লিচুর ওপর নির্ভর এখানকার বহু কৃষক পরিবার। এবার লিচুর ফলন এমনিতেই কম। তার ওপর ফাটল দেখা দেওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।’
তিনি বলেন, লিচুর পরিচর্যায় সময়মতো সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেছি। তারপরও লিচু কেন ফেটে যাচ্ছে তা বুঝি উঠতে পারছি না।
মানিকনগর গ্রামের লিচুচাষি মোস্তফা জামান নয়ন জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৫ দিন ধরে লিচুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। লিচু যখন গুটি থেকে আটিতে পরিণত হচ্ছিল তখন থেকেই ঈশ্বরদীতে তীব্র দাবদাহ শুরু হয়। এতে লিচুর খোসা মোটা হয়ে যায়। এখন লিচু পরিপক্ক হওয়ার সময় মোটা খোসা ফেটে যাচ্ছে। লিচু ফাটল নিরসনে ভাইরো নামের ছত্রাকনাশক স্প্রে করছি। এতে কিছুটা ফাটল নিরসন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’
লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল রউফ বলেন, ‘এবার লিচুর ফলন কম। তার ওপর লিচু ফেটে ঝরে পড়ছে। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘লিচুর বাগান কেনার পর সার ও কীটনাশকসহ পরিচর্যায় বহু টাকা খরচ করেছি। কিন্তু লিচু যেভাবে ফাটা শুরু করেছে পাকতে পাকতে পুরো বাগানের লিচু ফেটে ঝরে যেতে পারে। এতে আমার মতো বহু লিচু ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে যাবে।’
উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচুর হাট জয়নগর শিমুলতলার ইজারাদার সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিচু ফাটল ও ঝরে পড়ায় কৃষক-ব্যবসায়ীর পাশাপাশি আড়তদাররাও চিন্তিত। লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে গেলে বাজারে লিচুর আমদানি কমে যাবে। এতে আড়তদার ও ইজারাদার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। লিচুর ফাটল রোধে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকলে লিচুর জন্য তা খুবই ক্ষতিকর। এবার লিচুর যখন গুটি শুরু হয় তখন প্রায় এক মাসব্যাপী ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৩৮-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এতে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখনো তাপমাত্রা ৩৫ ডিগির ওপরে রয়েছে।’
তিনি বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে লিচু ফেটে যাচ্ছে। লিচু ফাটা রোধে কার্যকরী কোনো স্প্রে এ মুহূর্তে ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি না। শুধু লিচুগাছে প্রচুর পরিমাণ পানি স্প্রে করতে হবে। শেষ বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পর্যাপ্ত পানি স্প্রে করতে হবে।
এসআর/এমএস