ইটের পরিবর্তে অল্প খরচে পরিবেশবান্ধব ইউনিক ব্লক তৈরির কারখানা করে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন কুড়িগ্রামের মো. মিদুল হাসান মামুন (৩৮)। ইটের তুলনায় সাশ্রয়ী, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এ ব্যবসা বেশ লাভজনকও। প্রতি মাসে গড়ে ৩-৪ লাখ টাকা আয় করছেন বলে জানালেন এই উদ্যোক্তা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকার মো. সাইফুর রহমানের ছেলে মামুন বেসরকারি চাকরি ছেড়ে ২০২১ সালে এ কারখানা গড়ার উদ্যোগ নেন। কংক্রিট ব্লক পরিবেশবান্ধব হওয়ায় আরও আগ্রহ বাড়ে তার। পরে ইউটিউব দেখে অটো ব্লক তৈরির ধারণা নিয়ে চীন থেকে মেশিন এনে কারখানা গড়েন এই যুবক। দু’বছরের মধ্যেই বেশ সুনাম অর্জন করেছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২০২১ সালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের পূর্ব ধরলা ব্রীজ সংলগ্ন ‘সরকার কংক্রিট ব্লক’ নামের কারখানাটি গড়ে তোলেন মামুন। কারখানার ভেতরে উন্মুক্ত জায়গায় সারিবদ্ধভাবে সাজানো ব্লক। এখানে জার্মান প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ৭ ধরনের ব্লক তৈরি হয়। কংক্রিটের এই ব্লক নির্মাণে ব্যবহার করা হয় ২.৫ এফএম সিলেট বালু, ১.৫ এফএম লোকাল বালু, ওপিসি সিমেন্ট, হাইগ্রেড এডমিক্সার, কংক্রিট ও নুড়ি পাথর। এছাড়া গুণগত মান ঠিক রাখতে উৎপাদনের আগে পরে ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে এর পিএসআই নির্ণয় করা হয়। দিনে প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার ব্লক তৈরি হয় এই কারখানায়। দিন দিন বাড়ি ও রাস্তা তৈরিতে ব্লকের চাহিদা বেড়ে চলেছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা অর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করলে অটো ব্লকের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি সম্ভব বলে জানান ওই উদ্যোক্তা।
সরকার কংক্রিট ব্লকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিদুল হাসান মামুন বলেন, বেসরকারি চাকরি করা অবস্থায় ইউটিউবে সার্চ দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি। পরে কংক্রিট ব্লক বানানোর প্রক্রিয়া দেখে চাকরি ছেড়ে কারখানা শুরু করি।
তিনি বলেন, দিন যত যাচ্ছে এটির চাহিদা ততো বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজ ছাড়াও শহরে-গ্রামে বাড়ি তৈরির কাজেও দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে। কংক্রিটের ব্লক দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করলে সাধারণ ইটের চেয়ে ২৫ শতাংশ খরচ কম পড়ে। এছাড়া ভবনের লোড বিয়ারিং ক্যাপাসিটি সমানভাবে বাড়বে। পাশাপাশি মানের দিক থেকেও সাধারণ ইটের তুলনায় টেকসই-মজবুত হবে। এছাড়া পরিবেশের কোনোরকম ক্ষতিসাধন না করেই এটি উৎপাদন করা যায়।
তিনি আরও বলেন, কুড়িগ্রামে এটিই প্রথম ব্লক তৈরির কারখানা। দিনে দিনে উদ্যোক্তা তৈরি হবে। সরকার যদি কংক্রিট কারখানার ভ্যাট এবং ট্যাক্স রিবেইট, ট্যাক্স হলিডে, ক্যাশ ইনসেনটিভ সুবিধা প্রদান করে তাহলে বিনিয়োগকারীরা আরও উৎসাহিত হবেন।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, কংক্রিট ব্লক একটি পরিবেশবান্ধব ব্লক। আমরা এরইমধ্যে জেলার কয়েকটি কংক্রিট ব্লক কারখানা মালিকের আবেদন পেয়েছি। জেলায় কংক্রিট ব্লক কারখানা গড়তে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রচলিত ইট ভাটাগুলো বন্ধ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কংক্রিট ব্লক পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় ভালো ভূমিকা রাখবে। জেলা প্রাশসনের পক্ষ থেকে কংক্রিট ব্লক কারখানার মালিকদের উৎসাহিত করতে সব প্রকার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এফএ/এমএস