চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চলছে স্নাতক (সম্মান) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। এবার দুই লাখ ৫৬ হাজার ভর্তিচ্ছু পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, যা বিগত সময়ের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। ১৬ মে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শেষ হবে ২৫ মে।
অবস্থানগত কারণে সৌন্দর্যে ভরপুর চবি। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই রাস্তার উভয় পাশে স্বাগত জানাবে সারি সারি পাহাড়। অবারিত গাছপালার ছায়ায় ঘেরা এ ক্যাম্পাসে আছে ছোট-বড় অনেকগুলো ঝরনা। শুধু তাই নয়, কয়েকশ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। তাই বরাবরের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা। তবে তাদের এ ভালোলাগাকে ম্লান করে দিচ্ছে ক্যাম্পাসের সংঘর্ষ। ছাত্র সংগঠনের ঘন ঘন সংঘর্ষে আতঙ্ক বিরাজ করছে ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের মধ্যে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় ছাত্রশিবিরের আধিপত্য ছিল। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তৎপরতা নেই। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য বিরাজমান। এ অবস্থায় বিরোধী পক্ষ নয়; ঠুনকো কারণে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন নিজেরা। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৪ বছরে চবি ছাত্রলীগ প্রায় ৩৫০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বর্তমানে ১১টি গ্রুপে বিভক্ত। সব গ্রুপই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দীন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
মেয়েকে নিয়ে ঢাকা থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অনেক সুন্দর। এর পরিবেশ আমাকে সবসময়ই টানে। তবে ভয় লাগে মারামারি নিয়ে। প্রায়ই দেখি এখানে দুই পক্ষের মধ্যে হানাহানি হয়। আমি থাকবো ঢাকায় আর মেয়ে চট্টগ্রামে। মারামারি শুরু হলে অভিভাবক হিসেবে আমার চিন্তা বেড়ে যাবে। তাই মেয়ে চান্স পেলে ভর্তি করাবো কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
ছোট ভাইকে নিয়ে বগুড়া থেকে এসেছেন মনোয়ার হোসাইন। একসময় তিনি নিজেও ছিলেন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে চবির ছাত্ররাজনীতি নিয়ে তার আক্ষেপ প্রচণ্ড। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘টিভিতে প্রায়ই চবির মারামারির নিউজ চোখে পড়ে। ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে এসে এ মেধাবী শিক্ষার্থীরা কেন নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ায় তা বোধগম্য নয়। তবে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অভিভাবকদের অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। ছোট ভাই চান্স পেলে ভর্তি করাবো। তবে তাকে বলে দেবো যেন কোনো রাজনীতিতে না জড়ায়।’
ভর্তিচ্ছু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “আসার আগেও আব্বু বারবার বলছিলেন, ‘সাবধান, ওখানে প্রায়ই মারামারি হয়’। সংঘর্ষ নিয়ে অজানা ভয়তো কাজ করেই। ছাত্রনেতাদের উচিত সংঘর্ষ কমিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে কাজ করা।”
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদাফ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংঘর্ষ সৃষ্টি হয় গ্রুপিং রাজনীতি থেকে। আমরা চাচ্ছি এর বাইরে এনে হলকেন্দ্রিক সংগঠন চালাতে। পাশাপাশি প্রতিটি ছাত্রলীগ কর্মীকে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য গড়ে তুলতে চাই আমরা। সেজন্য ক্যারিয়ারমুখী বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ অনেক কমে এসেছে। ভর্তি পরীক্ষা ঘিরেও ছাত্রলীগ ভর্তিচ্ছুদের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। এভাবে মানবিক ও ভালো কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগ তার ভাবমূর্তি ধরে রাখবে। শিক্ষার্থীদের আস্থার সংগঠন হিসেবে কাজ করবে।’
সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এখন আর সংঘর্ষ নেই। তাই অভিভাবকদের ভয়েরও কারণ নেই। ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে ছাত্রলীগ খাবার, পানি, কলম ইত্যাদি বিতরণ করছে। এভাবে ভালো কাজ চালিয়ে যাবে ছাত্রলীগ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, যেকোনো অরাজকতার বিরুদ্ধে চবি প্রশাসন সবসময় কঠোর অবস্থানে। অতীতেও যারা মারামারি, ভাঙচুরে সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি যে সংঘর্ষ হয়েছে তার তদন্ত চলমান। অভিভাবক ও নবাগত শিক্ষার্থীদের একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস উপহার দিতে আমরা সবসময় তৎপর।
এসআর/জিকেএস