আইন-আদালত

গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ: ইস্টার্ন ব্যাংক কর্মকর্তার যাবজ্জীবন

গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ: ইস্টার্ন ব্যাংক কর্মকর্তার যাবজ্জীবন

গ্রাহকের হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তর করে আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ইস্টার্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা ইফতেখারুল কবিরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

Advertisement

একই সঙ্গে ব্যাংকটির গ্রাহক আবদুল মাবুদকে ১২ বছর এবং জাকের হোসেন বাপ্পীকে সাড়ে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আসামি বাপ্পীর স্ত্রী ফারজানা হোসেন ফেন্সীকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বিচারক।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আবদুল মজিদ এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে ইফতেখারুল কবিরকে আরও ২৪ বছর কারাদণ্ড, ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৯ বছর ৮ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক। এ পর্যন্ত ইফতেখারুলকে দুদকের করা তিনটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত।

Advertisement

অন্যদিকে দুই গ্রাহকের মধ্যে আবদুল মাবুদকে ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছর ১১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইভাবে জাকের হোসেন বাপ্পীকে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

পৃথক ৬টি ধারায় এ দণ্ড হলেও ইফতেখারুল কবিরকে দুটি ধারার সাজা আলাদা হিসেবে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন হিসেবে ৩০ বছর এবং ৪৬৭ ধারার আলাদা ১০ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন আদালতে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার মো. ইফতেখারুল কবির নগরীর চান্দগাঁও শাখায় দায়িত্ব পালনকালে গ্রাহক আবদুল মাবুদ ও জাকির হোসেন বাপ্পীর সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংকটির আরেক প্রবাসী গ্রাহক সুফি মোহাম্মদ হোসেন গণির নামে এফডিআর না খুলে পরবর্তীকালে ভুয়া হিসাব সৃষ্টি করে অন্য গ্রাহকের হিসেবে ট্রান্সফার করে ১ কোটি ৯২ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৫ টাকা আত্মসাৎ করেন।

২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের বিভিন্ন সময়ে এ ঘটনা ঘটলেও গ্রাহক ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়। এ নিয়ে থানায় মামলা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক তদন্ত শেষে ইফতেখারুল কবিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।

Advertisement

ওই মামলা তদন্ত শেষে ইফতেখারুল কবির, গ্রাহক আবদুল মাবুদ ও জাকির হোসেন বাপ্পীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এ ধরনের বিভিন্ন গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১১টি মামলা হয় ইফতেখারুল কবিরের বিরুদ্ধে।

অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯-সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরে বিচার প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার আদালত রায় ঘোষণা করেন।

অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু জাগো নিউজকে বলেন, মামলার তিন আসামি গ্রেফতার হয়ে হাজতে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় তাদের আদালতে হাজির করা হয়। পরবর্তী সময়ে সাজা পরোয়ানামূলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

এর আগে একই ধরনের অপরাধে অন্য ঘটনায় দুদকের আরও দুই মামলায় ইফতেখারুল কবীরকে গত ৩০ জানুয়ারি ২৬ বছর এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি ২৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন একই আদালত।

ইকবাল হোসেন/এমকেআর/এমএস