বিনোদন

এই ক্রান্তিলগ্নে মাসুদ করিমকে মনে পড়ে : আব্দুল হাদী

‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’- কালজয়ী এই একটি গানই যথেষ্ট গীতিকার হিসেবে মাসুদ করিমকে অমরত্ব দিতে। আজকের প্রজন্মে হয়তো অনেকেই জানেন না এই গীতিকবির কথা। তাই মাসুদ করিমকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে এসেছেন তারই স্ত্রী দিলারা আলো।বরেণ্য গীতিকবি মাসুদ করিম আজ প্রয়াত। চার সন্তান নিয়ে কানাডায় থাকেন তার স্ত্রী দিলারা আলো। বিদেশে থাকলেও দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য মন কাঁদে তার। বিশেষ করে প্রয়াত স্বামীর প্রিয় অঙ্গন গানের ভুবনের প্রতি তার ভালোলাগা। চেষ্টা করেন দূর থেকেই গানের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে।জানালেন, কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন তার পরিবারেরই একজন। তার সঙ্গে কথা হয়, খোঁজ খবর পান সংগীতাঙ্গনের। তাই স্বামীকে নিয়ে যখনই একটি স্মরণানুষ্ঠানের কথা ভাবলেন সাহায্যের জন্য সাবিনার দ্বারস্থ হলেন। সাবিনাও এগিয়ে এলেন। তারই ফলশ্রুতিতে গতকাল শনিবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গীতিকার মাসুদ করিম স্মরণে আলোচনা, পদক প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে  ২৫ জন গুণী শিল্পীকে সম্মাননা জানানো হয়। তারা হলেন- শিল্পী ফেরদৌসী রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, ফৌজিয়া খান, ফরিদা পারভীন, শাহীন সামাদ, আবিদা সুলতানা,রুমানা ইসলাম শ্রাবনী, ডলি ইকবাল, সৈয়দ আব্দুল হাদী, আব্দুল জব্বার, খুরশিদ আলম, শ্রীকান্ত আচার্য্য, কুমার বিশ্বজিৎ, সুবীর নন্দী, তিমীর নন্দী, শুভ্র দেব, কাদেরী কিবরীয়া, মাকসুদ, এম এ শোয়েব, আলম খান, শেখ সাদী খান, গাজী মাজহার, শাফাৎ খৈয়াম এবং কাজী আনোয়ার হোসেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ডাক ও টেলি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে মোবারক হোসেন খান শিল্পীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীরা। সম্মাননা নিতে গিয়ে নিজেদের বক্তব্যে মাসুদ করিমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন শিল্পীরা। তাদের মধ্যে আব্দুল হাদী বলেন, ‘মাসুদ করিম আমার ভাই এবং বন্ধু দুটোই ছিলেন। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে, কথা আছে। দুঃখ হয় জীবদ্দশায় আমরা তাকে মূল্যায়ণ করতে পারিনি। অবশ্য আমরা কাউকেই জীবদ্দশায় মূল্যায়ণ করতে পারি না। সংগীতের এই ক্রান্তিলগ্নে ভীষণ মিস করি মাসুদ ভাইকে। উনার লেখনী, উনার বানী ও শব্দ চয়ন আজ আর দেখি না।’তিনি আরো বলেন, ‘আজকালকার ছেলে মেয়েরা হয়তো জানেই না কে এই মাসুদ করিম। এটা তাদের ভুল নয়; আমাদের। গুণীর কদর আমরা করতে পারিনি। মাসুদ করিমের গীতিকবিতা ও গান নিয়ে তার চর্চাকে মূল্যায়ন করার সময় এসেছে।’মাসুদ করিমের ব্যক্তিজীবন নিয়ে শিল্পী বলেন, ‘আমি মাসুদ ভাইকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। কবিদের বাইরে রোমান্টিক ধারার গান রচনায় তিনি ছিলেন সফল। ব্যক্তিজীবনে তাকে কখনও পরচর্চা করতে দেখিনি। শান্ত কিন্তু হাসিখুশি মানুষ। তার কোনো শত্রু ছিলো না।’এদিকে নিজের বক্তব্যে সাবিনা ইয়াসমিন মাসুদ করিমকে নিয়ে বলেন, ‘আমার কোনো ভাই নেই। মাসুদ ভাইকে আমার মা নিজের ছেলে মনে করতেন। আমিও তাকে বড়ভাই জ্ঞান করতাম। আমাদের বাসায় তার নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিলো। মাসুদ ভাই আমাকে কখনও সাবিনা বলে ডাকতেন না। ডাকতেন রোজী নামে। অনেকেই হয়তো জানেন না আমার ডাকনাম এটি।’অনুষ্ঠানে মাসুদ করিমকে নিয়ে আরো স্মৃতিচারণ করেন মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহসহ অনেকেই। গীতিকার মাসুদ করিম কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার দুর্গাপুর কাজীপাড়ায় ১৯৩৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সাল থেকে তিনি রেডিও ও টেলিভিশনের জন্য গান রচনা করেন। তার লেখা কালজয়ী গানের মধ্যে রয়েছে ‘তন্দ্রাহারা নয়ন আমার’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘শিল্পী আমি তোমাদের গান শোনাব’, ‘আমি সুজন দেখে ভাব করেছি’, ‘এ কি বাঁধনে বলো জড়ালে আমায়’, ‘সন্ধ্যারও ছায়া নামে’, ‘মন তো নয় আর আয়না’, ‘ওগো চাঁদ তুমি কি জানো না’, ‘তুমি যে আমার ভালোবাসা’ প্রভৃতি। প্রখ্যাত গজল সম্রাট মেহেদি হাসান, শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকাসহ অনেক শিল্পীই মাসুদ করিমের লেখা গান গেয়েছেন। সম্মাননা প্রদান শেষে দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রীনাত ফৌজিয়ার পরিবেশনায় সেতার বাদন এবং সংগীত পরিবেশন করেন মাসুদ করিমের কন্যা সিনথিয়া ও কন্ঠ শিল্পী সূচিত্রা সুত্রধর, রুখসানা আক্তার রূপসা, শুভ্রদেব, এম এ মোমেন, শাহীন, জাহাঙ্গীর সাঈদ এবং শিশুশিল্পী সিনথি। সবশেষে ঘোষণা দেয়া হয়, মাসুদ করিম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এখন থেকে প্রতি বছর তাকে অানুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করবে। এলএ/এমএস