লক্ষ্মীপুরে গৃহবধূ তানজিনা আক্তারকে (২১) আত্মহত্যার প্ররোচনায় স্বামী আবু ইউছুফকে (২৯) সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ইউছুফ সদর উপজেলার দালালবাজার ইউনিয়নের খন্দকারপুর গ্রামের মৃত হাসানুজ্জামানের ছেলে।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামি ইউছুফের প্ররোচনায় তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেন আদালতে তা প্রমাণিত হয়। এতে আদালত তাকে সাজা দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, তানজিনা দালালবাজারের খন্দকারপুর গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে। ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল একই গ্রামের ইউছুফের সঙ্গে তিন লাখ টাকা দেনমোহরে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর ইউছুফ তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। তার কাছ থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ইউছুফ তাকে তালাক দেন। এতে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর তানজিনা বাদী হয়ে ইউছুফ, তার ভাই ইদ্রিস ও মা শিরিন বেগমের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। পরে সামাজিকভাবে বৈঠকের মাধ্যমে তানজিনা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।
এদিকে, ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তালাক প্রত্যাহার করে এফিডেভিটের মাধ্যমে ইউছুফ তানজিনাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে নেন। এর কিছুদিন পর ফের তার ওপর অত্যাচার করা হয়। আবারও যৌতুকের জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল শ্বশুরবাড়িতেই ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে তানজিনা আত্মহত্যা করেন।
এ ঘটনায় ইউছুফসহ তিনজনকে আসামি করে তানজিনার দুলাভাই আনোয়ার হোসেন সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম আসামি ইউছুফের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে অন্য দুই আসামি ইউছুফের ভাই ইদ্রিস ও মা শিরিনের বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতা না পাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ রায় দিলেন।
কাজল কায়েস/এমআরআর/এএসএম