ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। বিস্ফোরণ ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। মামলায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের জেলা এবং উপজেলার নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম জানান, দায়ের করা দুটি মামলার একটিতে ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৩০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর মডেল থানার দুজন উপপরিদর্শক বাদী হয়ে মামলা করেন।
এর আগে সোমবার (১২ জুন) সকালে শহরের লোকনাথ দিঘীর মাঠ থেকে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করায় একপক্ষ আনন্দ মিছিল বের করার ঘোষণা দেয়। একই সময় ও স্থানে সরকারের দুর্নীতি এবং লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
শহরে এমন পরিস্থিতিতে নতুন কমিটি তাদের কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করে শহরতলীর বিরাসার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আয়োজন করে। সকাল থেকে নেতাকর্মীরা মিছিলে অংশ নিতে বিরাসার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এই খবরে পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিরাসার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হামলা করে।
এসময় প্রায় অর্ধ শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ হয়। উভয়পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তা ছড়িয়ে পড়ে বিরাসার মোড় ও খৈয়াসার সড়কে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ছাত্রদলের সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ সহকারী আব্দুর রহমান সানীর বড় ভাই কবির আহমেদ ভূইয়ার অনুসারী শাহীনুর রহমানকে আহ্বায়ক ও সমীর চক্রবর্তীকে সদস্য সচিব করা হয়। নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক শাহীন, সদস্য সচিব সমীর, যুগ্ম আহ্বায়ক এলভীন লস্কর ও আব্দুল গাফফার রিমন শুক্রবার সকালে জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. ভিপি শামিমের কান্দিপাড়ার বাসায় যান। সেখানে সদ্য ঘোষিত কমিটির সদস্যদের শুভেচ্ছা দেওয়া হচ্ছে বলে জানতে পারেন পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এই খবরে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা জেলা কৃষক দলের আহ্বায়কের কান্দিপাড়ার বাড়িতে হামলা চালান। এসময় আবু শামীমের বাড়ির পেছন দিয়ে সদ্য ঘোষিত কমিটির সদস্যরা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। একই দিন বিকেলে জেলা শহরের টিএ রোড ও পাওয়ার হাউস রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে তারা কান্দিপাড়ায় জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান ও কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাউসার কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালান।
এরপরের দিন শনিবার রাতে শহরের কান্দিপাড়ায় সদ্য ঘোষিত ছাত্রদলের কমিটির নেতারা পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেন। এই খবরের পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেন। এতে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় অর্ধশত রাউন্ড গুলি বিনিময় হয় এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/জেডএইচ