দেশজুড়ে

অবশেষে সংস্কার হচ্ছে ফেনীর জয়নাল হাজারী সড়ক

মালিকানা নিয়ে রশি টানাটানির দীর্ঘ ১০ বছর পর সংস্কার হচ্ছে ফেনীর জয়নাল হাজারী সড়ক (পাগলা মিয়া সড়ক)। এ সড়কে খানাখন্দের কারণে দীর্ঘদিন মানুষের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। রোববার (১৮ জুন) সকালে মধ্যম চাড়িপুর আমেনা-সিরাজ কনভেনশন হলের সামনে সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী।

উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, সড়কটি সংস্কার করা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল স্থানীয়দের। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর সহযোগিতায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সড়কটি সংস্কার কাজ শেষ হবে। এলাকার মানুষ দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।

মেয়র আরও বলেন, সড়কটি ভিআইপি সড়ক হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে এখানকার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। তাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে এই রাস্তাটি সিসি ঢালাই করা হবে। রাস্তাটি সংস্কার করছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এনডিই)। ২৪ ফুট প্রশস্ত করে রাস্তাটি সংস্কার হবে। যদি ২৪ ফুটের আশপাশে কোনো বাড়ি ঘর বা স্থাপনা থাকে তাহলে সেটি অপসারণ করা হবে।

উদ্বোধনকালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জায়লস্কর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিলন, ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মেহেদী আলম চৌধুরী রুবেল, ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাদাত চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাঈন উদ্দিন সুমন, সহ-সম্পাদক এনএম নবী, জেলা যুব লীগের সহ-সম্পাদক মহিবুল্লাহ চৌধুরী মামুন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

১০ বছর ধরে বেহাল হাজারী সড়ক

ফেনী শহরের হাজারী সড়কের বেহাল দশা। খানাখন্দে ভরা সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলে হেলেদুলে। মালিকানা নিয়ে টানাপোড়েনে গত ১০ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়কটি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বাসিন্দারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল ও ফেনী-কুমিল্লা সড়কের সংযোগ স্থাপন করেছে এ সড়ক, যা ফেনীতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম। ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদিন হাজারীর উদ্যোগে ২০০০ সালে মাটি দিয়ে সড়কটি তৈরি করা হয়। এরপর থেকে এটি পরিচিত হয় ‘হাজারী সড়ক’ নামে। জেলার প্রশাসনিক কার্যালয়গুলোও পাশেই অবস্থিত হওয়ায় শহরের অন্য সড়কের তুলনায় এর গুরুত্ব বেশি। জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন বলে এটি পরিচিতি পায় ‘ভিআইপি রোড’ নামেও। বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুরবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সড়কের আশপাশের দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে সড়কটি পাকা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর সড়কটি ফেনী পৌরসভাকে হস্তান্তর করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের সংস্কার কাজ করে পৌরসভা। এরপর গত ১০ বছরে আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি।

পৌরসভার উদ্যোগে কয়েকবার খাদগুলো ইট-বালু দিয়ে ভরাট করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। বর্তমানে সড়কটির অবস্থা জরাজীর্ণ। ২০২২ সালের শুরুতে সড়ক ও জনপথ বিভাগে সড়কটি হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। মালিকানা নিয়ে নানা টানাপোড়েনে সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। সড়কজুড়ে খাদের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

এ নিয়ে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাগোনিউজ২৪.কম-এ ‘১০ বছরেও সংস্কার হয়নি ফেনীর হাজারী সড়ক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া একাধিক সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসজে/জেআইএম