আগে ঈদের দিন আমরা ছোট-বড় সবাই মিলে অনেক আনন্দ করতাম। বন্ধুরা দলবেঁধে গুলি (মার্বেল), গোল্লাছুট, লুকোচুরি, গাদিসহ আরও কত খেলা খেলতাম। আমাদের সঙ্গে গ্রামের বড় ভাই, চাচা, মা, ছোট ভাইরাও অংশ নিতো। অনেক আনন্দ হতো।
‘এখন এসব খেলা আর নেই। এখনকার তরুণ ও শিশুরা মোবাইল নিয়েই পড়ে থাকে। আগের দিনে গ্রামে যে আনন্দ হতো এখনকার তরুণ ও শিশুরা তার ছিটেফোঁটাও পায় না’ বলছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ফতেপুর গ্রামের মো. রেজাউল ইসলাম।
চল্লিশ বছর ছুঁইছুঁই রেজাউল বলেন, এখন গ্রামের ঈদ আনন্দ বদলে গেছে। আগে ঈদের মাঠে নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করতাম। ছোট-বড়, ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ ছিল না। এখন ঈদের নামাজ শেষে আগের দিনের মতো কোলাকুলি করার দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না।
‘আগে ঈদের নামাজ শেষে বন্ধুরা একে অন্যের বাড়িতে চলে যেতাম। মজা করে সেমাই, পায়েস খেতাম। এরপর সবাই বাজারে বা স্কুলের মাঠে গুলি খেলায় মেতে উঠতাম। বিকেল হতেই গাদি খেলা, গোল্লাছুট বা তালপাতার বৌচি খেলায় মেতে উঠতাম। সন্ধ্যা হলেই শুরু হতো লুকোচুরি খেলা। কেউ কেউ গাছের মগডালে উঠে বসে থাকতো। অন্ধকার আর গাছের ঘন পাতায় লুকিয়ে থাকা মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো। এভাবে খেলায় খেলায় কখন যে রাত গভীর হয়ে যেতো টের পেতাম না’ বলেন রেজাউল।
তিনি বলেন, এখনকার শিশুদের আর এসব খেলা খেলতে দেখা যায় না। এখনকার প্রজন্ম সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমার ছেলেমেয়ের কাছে যখন আগের দিনের ঈদ আনন্দের গল্প করি তারা বিশ্বাসই করতে চায় না। ঈদের সময় আসলেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে, আর আফসোস করি। আমাদের ছোটবেলায় গ্রামে কত আনন্দ হতো।
একই গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম ঈদের দিন মুরব্বিদের কাছ থেকে ঈদের সালামি নিতাম। এখনকার প্রজন্মও ঈদ সালামি নেয়, তাবে তা বাপ-চাচার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ঈদের মাঠে আগে আমরা একে অন্যের সাঙ্গে কোলাকুলি, হইচই করতাম। এখন কোনো রকমে ঈদের নামাজ শেষ করেই যার যার মতো চলে যায়।
তিনি বলেন, ঈদের নামাজ শেষে আমরা নানা রকম খেলায় মেতে উঠতাম। সব থেকে জমজমাট হতো মারবেল খেলা। পিল খেলা, গাইবাট, গদ, সালসহ মারবেল দিয়ে কত রকমের খেলা খেলতাম। এখনকার প্রজন্মের বেশিরভাগ এসব খেলার নাম শোনেইনি। ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দিন খেলায় খেলায় সময় কেটে যেত। বাবা-মা পড়ার চাপ দিতেন না। কত আনন্দ হতো। স্মৃতির পাতায় ছোটবেলার দিনগুলো ভেসে ওঠে, আর ভাবি এখনকার প্রজন্ম রোবট হয়ে যাচ্ছে।
আরিফুল ইসলাম নামে আর একজন বলেন, ২০০৪ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় চলে যাই। ঢাকা থেকে ঈদের সময় বাড়িতে আসলে অনেক আনন্দ হতো। বন্ধুরা দলবেঁধে ঘুরতে যেতাম, দিনভর নানা রকম খেলায় মেতে থাকতাম। আমার যতটুকু মনে পড়ে ২০০৭ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে ছোট বেলায় খেলাগুলো হারিয়ে যেতে থাকে।
তিনি বলেন, এখন গ্রামে আসলে মন খারাপ হয়ে যায়। মার্বেল, গোল্লাছুট, গাদি, লুকোচুরি খেলা এখন গ্রামে দেখা যায় না। মা-বাবা আছে তাই প্রতি ঈদেই গ্রামের বাড়িতে আসি। এখন গ্রামের পরিবেশ অনেকটা শহরের মতো হয়ে গেছে। গ্রামের মানুষের মধ্যে আগের মতো হৃদ্যতা এবং আনন্দ উল্লাস করার প্রবণতা দেখা যায় না। এখন ছোট-বড় সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।
এমএএস/এসএনআর/জিকেএস