সরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে রোগীসহ সাধারণ মানুষের বিরূপ প্রতিক্রিয়া থাকলেও মূলত মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন আশার আলো ছড়াচ্ছে। সেবার দিক দিয়ে রোগীদের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে সরকারি এ হাসপাতালটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকপূর্ণ সেবায় শুধু স্থানীয়রাই নন, দূরদূরান্ত থেকেও রোগী আসছেন এ হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে ডা. মো. শাহীন যোগদানের পর থেকে পাল্টে যেতে শুরু করে ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের বেহাল দশা। চলমান চিকিৎসক-কর্মচারী সংকটের মধ্যেও তিনি চালু করেছেন দীর্ঘ এক যুগ ধরে বন্ধ থাকা অপারেশন থিয়েটারটি। ১ জুন অপারেশন থিয়েটার চালুর প্রথম দিনই দুজন প্রসূতির নিরাপদ সিজার হয়েছে। এরপর থেকে নিয়মিত প্রতি সোমবার হাসপাতালে চলছে সিজারসহ অ্যাপেনডিকস, হার্নিয়া ও হাইড্রোসিল অপারেশনও।
এদিকে শুক্রবার ছুটির দিনও পরপর চার প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন হাসপাতালের মিডওয়াইভস ও সিনিয়র স্টাফ নার্সরা। এদিন নরমাল ডেলিভারি করানো হয় উপজেলার বাঁশতলা এলাকার আয়েশা বেগম, বাজিকরের খন্ডের লিমা বেগম, মালগাজীর ফাতেমা বেগম ও পৌরসভার বালুরমাঠের তানজিলা বেগমের।
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার চালুর আগে এখানকার প্রসূতিদের স্থানীয় অনভিজ্ঞ প্যাথলজি কাম ক্লিনিকগুলোতে সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হতো। সেখানে নরমাল প্রসূতিরা গেলেও সিজার করতে বাধ্য করা হতো। আর সিজারে চরম দুর্ভোগ ও আর্থিক কষ্টে পড়তেন দরিদ্র শ্রেণীর পরিবারগুলো। কখনো কখনো তাদের নরমাল ডেলিভারি ও সিজার করাতে নিতে হতো খুলনা ও বাগেরহাটে। ফলে ভোগান্তি ও অর্থ ব্যয়ে পড়তেন রোগী-স্বজনরা।
কিন্তু হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার চালুর পর থেকে রোগীদের কাছে এখন আস্থা ও আশার আলোতে পরিণত হয়েছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নামমাত্র স্বল্প খরচে শুধু সিজারই নয় নানা অপারেশন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রোগী দেখা ও ওষুধ সরবরাহের পর্যাপ্ততায় স্থানীয় রোগীদেরকে এখন আর খুলনা-বাগেরহাট যেতে হচ্ছে না। ফলে হাসপাতালটিতে বাড়ছে রোগীর চাপও।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে ২৮ চিকিৎসকের বিপরীতে আছেন মাত্র সাতজন। এদের মধ্যে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। এরপরও কম সংখ্যক জনবল নিয়ে আমরা দিন-রাত সেবা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের নিয়মিত ও নিরলস সেবায় রোগীরা এ হাসপাতালের প্রতি আস্থা ফিরে পেয়েছেন। এ উপকূলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে সেবা দিতে আমাদের স্টাফরা ডিউটির বাইরেও কাজ করছেন। হাসপাতালের সব ডাক্তার, নার্স, মিডওয়াইভসসহ অন্য কর্মচারীরা আন্তরিক হওয়াতেই আমরা কম জনবল দিয়েও প্রতিনিয়ত সেবা দিতে পারছি।
আবু হোসাইন সুমন/এসজে/জিকেএস