বিশেষ প্রতিবেদন

ছিন্নমূলদের আনাগোনা কমছে না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে বাড়ছে জনসংখ্যা। সেই সঙ্গে আকাশচুম্বী ভবনও পাল্লা দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে ক্রমেই কমছে সবুজ। ইট-পাথরে দম বন্ধ হওয়া পরিবেশ থেকে একটু সবুজের প্রশান্তির আশায় নগরীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।তবে, যানজট আর কংক্রিটে ঘেরা দালান থেকে স্বস্তি পেতে এই উদ্যানে বসে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া খোঁজাও দায়। কারণ রাজধানীর অন্যান্য উদ্যানগুলোর ন্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও হকার, মাদকসেবী ও যৌনকর্মীদের অভয়ারণ্য।সমগ্র উদ্যান জুড়ে ছিন্নমূল মানুষের আবাস। তারা  উদ্যানটিকে তাদের আবাসিক স্থলে পরিণত করেছে। প্রয়োজনীয় জিনিষ, জামা-কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে যেখানে সেখানে। যদিও এর ভায়াবহতা কিছুদিন আগে  আরো ব্যাপক ছিল, সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগে এখন কিছুটা কমেছে। কিছুদিন আগেও এখানে মাদকদ্রব্যের আখড়া ছিল। কার্যত ছিন্নমূল মানুষ, নেশাখোর, মাদকসেবী, ছিনতাইকারীদের দখলে ছিল উদ্যানটি। তখর এখানে প্রকাশ্যেই গাঁজা, মাদক বিক্রি হতো। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় ক্রেতারও অভাব ছিল না। তবে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ গ্রহণে উদ্যানের পরিবেশ এখন কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবুও রয়ে গেছে ছিন্নমূলদের আনাগোনা, বসবাস।সন্ধ্যা নামলেই  ছিনতাইকারী ও ভাসমান পতিতাদের উপস্থিতিসহ মাদকসেবীদের আনাগোনার ব্যাপকতা বাড়লে, কিছুদিন আগে নির্ধারিত সময়ের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কর্তৃপক্ষ।সম্প্রতি ‘পার্ক সৌন্দর্য, উপযোগিতা ও ঐতিহ্য সুরক্ষা’ শীর্ষক এক সেমিনার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পার্ক, উদ্যান রক্ষা করতে চাই।পাশাপাশি তিনি রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যথাযথভাবে সংরক্ষণে সরকারি পরিকল্পনা ও আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এসব পার্ক ও উদ্যানে যারা হাটাচলা ও বেড়াতে যায় তাদেরকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।একই আলোচনা সভায় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, বাংলাদেশের উদ্যান ও পার্ক সংরক্ষণের জন্য একটি পলিসি দরকার। রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সকল অবৈধ স্থাপনা অবিলম্বে উচ্ছেদ, দুর্লভ প্রজাতির গাছ রক্ষায় একটি পর্যবেক্ষন সেল গঠনসহ পার্ক ও উদ্যান সংরক্ষণে ‘পার্ক পুলিশ’ গঠন করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি উদ্যান ও পার্ক  সংরক্ষণে জনসচেতনতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিদিন বিকেলে হাটতে আসেন রাজধানীর বেসরকারি কলেজ শিক্ষক অশিত কুমার।  পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্যানে মাদকসেবী, ছিনতাইকারী ও পতিতাদের আনাগোনা আগের চেয়ে কমেছে। তবে হাটার রাস্তা দখল করে উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে শুয়ে বসে থাকতে দেখা যায় ছিন্নমূল মানুষদের। আর তাদের ছোট বাচ্চাদের মল মূত্রে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। রাস্তার উপরেই জামা কাপড় শুকাতে দিয়েছে তাদের।উল্লেখ্য, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি সুপরিসর নগর উদ্যান। এটি পূর্বে রমনা রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল। এক সময় এখানে ঢাকায় অবস্থানরত ব্রিটিশ সৈন্যদের ক্লাব ছিল। পরবর্তীতে স্থানটিকে রমনা রেস কোর্স এবং তারপর রমনা জিমখানা বলা হত। ব্রিটিশ শাসনের পর মাঠটিকে কখনও কখনও ঢাকা রেস কোর্স নামে ডাকা হত এবং প্রতি রোববার ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত।এটি একটি জাতীয় স্মৃতিচিহ্ন। এখানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী এই উদ্যানেই মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। রমনা উদ্যানের দক্ষিণে পুরনো হাইকোর্ট ভবন, তিন জাতীয় নেতা শেরে-বাংলা এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমাধি (তিন নেতার মাজার), পশ্চিমে বাংলা একাডেমি, অ্যাটমিক অ্যানার্জি কমিশন, ঢাবি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, পাবলিক লাইব্রেরি এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, উত্তরে বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা ক্লাব ও ঢাকা টেনিস কমপ্লেক্স এবং পূর্বে সুপ্রিম কোর্ট ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট ও রমনা পার্ক।এএস/এমএমজেড/একে/পিআর