দেশজুড়ে

সেই জমির মালিকানা নিয়ে যা জানা গেলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আশিকুর রহমান চাঁদের দাদা মানিকউল্লা শেখের প্রায় ৫০০ বিঘা জমি ছিল। সেসব জমি এখন ওয়াক্ফ এস্টেটের। এর মোতাওয়াল্লি হিসেবে সবকিছু দেখাশোনা করেন চাঁদ। এই এস্টেটের ১৪ বিঘা জমির মধ্যে একটি অংশ চাঁদের বাবার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন বলে দাবি করেন সোহেল রানা ছোটন (৪৫)।

ওই জমির মালিকানার দ্বন্দ্বে সোমবার (১০ জুলাই) চাঁদের লোকজনের হামলায় প্রাণ হারান সোহেল। শুধু তিনিই নন এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন বর্গাচাষি।

হামলায় ওই বিরোধপূর্ণ জমির বর্গাচাষি পাকড়ি ইউনিয়নের বড়গাছি কানপাড়া গ্রামের নাইমুল ইসলাম (৮০), তার ভাই মেহের আলী (৭০) এবং গুসিরা গ্রামের মনিরুল ইসলাম (৪৫) নিহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সোহেল এক বছর আগে সেই জমিতে বর্গাচাষিদের নিয়ে ধান রোপণ করতে গিয়েছিলেন। এসময় অতর্কিতভাবে প্রতিপক্ষরা চারপাশ থেকে ঘিরে তাদের ওপর হামলা করেন।

স্থানীয়রা জানান, সোমবারের সংঘর্ষে সোহেল রানার পক্ষে নেতৃত্ব দেন তার খালাতো ভাই সেলিম রেজা। তিনি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপসহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তবে সংঘর্ষের পর থেকে পলাতক থাকায় এ বিষয়ে সেলিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে সোহেল রানা দাবি করে আসছিলেন, চাঁদের বাবা তমির উদ্দিন শেখ জীবিত থাকাকালে তার কাছ থেকে তিনি ওই জমি কিনেছেন। এরপর খাজনা-খারিজও করেছেন। অন্যদিকে চাঁদের দাবি, ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি হস্তান্তর করা যায় না। সোহেল রানাদের দলিল জাল। তবে এই জমি সোহেলদেরই দখলে আছে। তারা বর্গা দিয়ে জমি চাষও করান।

এই সংঘর্ষের বেশ কিছুদিন আগে জমি নিয়ে বিবাদের কারণে দুইপক্ষই থানায় বসেছিল। সেখানে সোহেল রানার পক্ষে জমির কাগজপত্র দেখানো হয়। তবে ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি কারও নামে বিক্রির সুযোগ নেই বলে দাবি করেন চাঁদ। তাই তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি মামলা না করে এক মাস আগে চাষাবাদে বাধা দিতে মারামারি করেছিলেন। তখন সোহেল রানার পক্ষে মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলায় কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তারা জামিনে এসে আবারও সংঘর্ষে জড়ান। যার ফলে চারজনের প্রাণ গেলো

এদিকে, এ ঘটনায় গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজশাহী জেলা প্রশাসককে একটি অবহিতকরণ প্রতিবেদন দেন। সেখানে সেলিম রেজাকে সংঘর্ষের একটি পক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউএনওর দেওয়া প্রতিবেদনে ঘটনার স্থান ও সময় উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সরেজমিনে জানা যায় যে, ওই এলাকায় সেলিম রেজা ও আশিক চাঁদের মধ্যে ১৪ বিঘা জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন সকালে সেলিম রেজা ১০ থেকে ১৫ জন নিয়ে ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে ধান লাগানোর জন্য যান। এসময় চাঁদের লোকজন তাদের জমিতে ধান লাগাতে বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রতিবেদনে নিহত ও আহতদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের বিষয়ে গোদাগাড়ীর ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এই প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এখন পুলিশ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে।

ওই বিরোধপূর্ণ জমির বর্গাচাষি নাইমুলের ভাতিজা নাসির উদ্দিন বলেন, আমার চাচা জমিটি বর্গাচাষ করতেন। তিনি মালিকের নির্দেশে জমি আবাদ করতে গিয়েছিলেন। তার কোনো দোষ ছিল না। তাকে কেন মারা হলো? জমির বিরোধ তো আর তার সঙ্গে ছিল না। তারপরও তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, এরইমধ্যে আমরা এজাহারে নাম আছে এমন ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। তার মধ্যে সাতজনকে আমরা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। সেটিও আমরা পেয়েছি। রিমান্ডে আনার পরই এসব বিষয়ে জানা যাবে।

গত সোমবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়নের ইয়াজপুর গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় চারজন নিহত হন। ওইদিন সকালে জমিতে সোহেলের লোকজন ধান লাগাতে গেলে চাঁদের লোকজন হামলা চালান। এতে দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহতদের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।

এমআরআর/জেআইএম