এক বছর নয় মাস বয়সের আল আমিন নামের এক শিশু সন্তানকে ৭ দিন তার বাবার বাসা এবং ৭ দিন নানীর হেফাজতে রাখার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে সাত বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর সন্তানকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। শিশু ছেলেকে ফিরে পেতে ইতালি প্রবাসী এক বাবার করা রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও একেএম আতিকুর রহমান।হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে সন্তান আল আমিন বাবার কাছে থাকবে বলে জানান আইনজীবী। এই রায়ের ফলে অর্থাৎ ডিভোর্সের পর মা তার পুত্র সন্তানের অবিভাকত্ব হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান আইনজীবী।আইনজীবী ব্যারিস্টার আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিমের ইতালি প্রবাসী ছেলে শফিকুল ইসলাম নাজিম ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি বিয়ে করেন কেরানীগঞ্জের আসকর আলীর মেয়ে আফসানা আক্তারকে। বিয়ের পর ২০১৪ সালের ১০ জুন স্ত্রী আফসানা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান জন্মের দুদিন পর ১২ জুন আফসানা গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান।পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট নাজিম দ্বিতীয় বিয়ে করেন আফসানার ছোটবোন জান্নাতুল ফেরদাউস তামান্নাকে। সাত-আট মাস একত্রে ঘর-সংসার করার পর পারিবারিক কলহের জের ধরে ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ তামান্না তার স্বামী নাজিমকে তালাক দেন। তার এক সপ্তাহ আগে নাজিমের পুত্র সন্তান আল-আমিনকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান ন্ত্রী তামান্না। পরে ওই তালাক ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই কর্যকর হয়।পুত্র সন্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে ফেরত চেয়ে থানায় জিডি অ্যান্ট্রি এবং লিগ্যাল নোটিশ পাঠায় বাবা। লিগ্যাল নোটিশে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয়া হয় অন্যথায় মামলা দায়ের করবেন বলে উল্লেখ করেন।এরপরও সন্তান ফেরত না পেয়ে নাজিম ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ (দুই) এ হান্ড্রেড (১০০) (চার্চ ওয়ারেন্ট) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই আদালতে মামলার শুনানি শেষে যতদিন পর্যন্ত সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণ না হবে, ততোদিন পর্যন্ত সন্তান তার নানী রেহানা খাতুনের কাছে থাকবে বলে আদেশ দেন।ওই আদেশের বিরুদ্ধে এবং সন্তান ফেরত চেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি নাজিম হাইকোর্টে রিট (হ্যাভিয়াস কর্পাস) পিটিশন দায়ের করেন। পরে ওই আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি করে শিশু আল আমিনকে আটক রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এই মমে রুল জারি করেন আদালত। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক, ওসি দক্ষিণ (কেরানীগঞ্জ থানা), ওসি (মিরপুর থানা) আল আমিনের নানী ও খালা তামান্নাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। বুধবার ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত এই রায় দেন।এফএইচ/এসএইচএস/এমএস