আইন-আদালত

এক আসামি মারা যাওয়ায় পিছিয়েছে গাইবান্ধার ৯ জনের যুক্তিতর্ক

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মোফাজ্জল হক প্রধানসহ ৯ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে আগামী ৩১ আগস্ট পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি জাগো নিউজকে জানান, মামলার একজন আসামি পালিয়ে মালয়েশিয়া ছিলেন। সেখানে তিনি মারা গেছেন। ওই আসামির মারা যাওয়ার বিস্তারিত তথ্য আসার পর মামলার বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। তাই তারিখ পিছিয়ে আগামী ৩১ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও)। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুতানা চমন ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

এ মামলায় আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার আছেন— মো. মোফাজ্জল হক প্রধান ওরফে মোফা (৮২), মো. সেকেন্দার আলী (৬৬), মো. আব্দুল করিম (৬৩), মো. ইসমাইল হোসেন (৭০), মো. আকরাম প্রধান (৬৮) ও মো. হাফিজার রহমান (৬৪)। পলাতক রয়েছেন— মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন ওরফে মো. শরফ উদ্দিন খান (৬৪), মো. সামছুল ইসলাম খান (৬৪) এবং মো. আব্দুল মান্নান (৬৪)। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে তিনজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৪ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। তার পর ডিফেন্স পক্ষ থেকে আসামির সাফাই সাক্ষীর উপস্থাপন করা হয়।

২০১৯ সালের ২৫ মার্চ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মোফাজ্জল হক প্রধানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওইদিন রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনটি ভলিউমে ১৮১ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. আব্দুল হান্নান খান।

আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণসহ মোট চারটি অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ এ মামলার তদন্ত কাজ শেষ হয়।

অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১০ মে থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের ৭ ও ১০ নম্বর কাটাবাড়ী গ্রাম এবং মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের শ্রীপতিপুর ও বালুয়া গ্রামে এসব অপরাধ করেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে চারটি অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগগুলো হলো-

প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১০ মে আসামিরা কাটাবাড়ী ইউনিয়নের ৭ নম্বর কাটাবাড়ী গ্রামের জিয়া মণ্ডল, মনা মণ্ডল ও ওমেছ মণ্ডলকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন, জবাই করে হত্যা এবং লুণ্ঠন চালান। এরপর শহীদ জিয়া মণ্ডলের ছেলে ভিকটিম আব্দুর রশীদ ও আব্দুল জোব্বার এবং কাঠালবাড়ী উত্তরপাড়ার মো. আজিজার রহমানকে আটক, অপহরণ ও নির্যাতন করেন তারা।

দ্বিতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২২ জুলাই আসামিরা গাইবান্ধা বালুয়া গ্রামের মো. ইউনুস আলী আকন্দের বাড়িতে তার স্ত্রীসহ মোট দুইজনকে ধর্ষণ করেন।

তৃতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট রাতে আসামিরা গোবিন্দগঞ্জের শ্রীপতিপুর গ্রামের আব্দুল কাদের সরকার, আব্দুস সোবহান আকন্দ ও এমাদ উদ্দিন আকন্দকে আটক, অপহরণ, হত্যা করেন। এছাড়াও শ্রীপতিপুর গ্রামের একজনকে ধর্ষণ করেন তারা।

চতুর্থ অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর আসামিরা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ১০ নম্বর কাটাবাড়ী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন ওরফে দুলাল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজালাল মিয়া ওরফে ঝালু মিয়াকে আটক, অপহরণ, হত্যা ও লুণ্ঠন করেন।

এফএইচ/এমএএইচ/জেআইএম