দেশজুড়ে

বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

দেশের সর্বোত্তরের সীমান্ত উপজেলা তেঁতুলিয়া। এই উপজেলার ১নং ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাবান্ধা। পাথর শিল্পসমৃদ্ধ এই সীমান্ত ইউনিয়নে রয়েছে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এবং শুল্কস্টেশন। সঙ্গত কারণেই পঞ্চগড়ের ৪৩ ইউনিয়নের মধ্যে বেশ গুরুতপূর্ণ বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদ। আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফায় বাংলাবান্ধায় অনুষ্ঠিত হবে ইউপি নির্বাচন। বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত আর নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে চারদেশীয় বাণিজ্যিক গেটওয়ে এই বাংলাবান্ধা। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিয়ন দখলে নিতে মরিয়া আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য প্রার্থীরা। তেঁতুলিয়া উপজেলা বিএনপি ভোটার অধুষ্যিত হলেও বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে বিগত চারবার আওয়ামী সমর্থক প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার আওয়ামী লীগের শক্ত বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বিএনপি প্রাথী সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাবান্ধায় চলছে প্রার্থী ও সমর্থকদের শেষ মুহূর্তের প্রচারণা আর গণসংযোগ। পাশাপাশি শুরু হয়েছে আচরণবিধী লঙ্ঘনের প্রতিযোগীতা। প্রতিদ্বন্দ্বী চার চেয়ারম্যান প্রার্থীই একে অন্যের প্রতি আচরণবিধি লঙ্ঘেনের অভিযোগ তুলেছেন। নানা কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কার কথা বলছেন সাধারণ ভোটাররা।বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৯ হাজার ৯৬০ জন। গত নির্বাচনেও এখানে আওয়ামী লীগ সমর্থক কুদরত-ই-খুদা মিলন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নায়বুল ইসলাম মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আওয়ামী সমর্থক আরেক প্রার্থী আব্দুল লতিফ আনারস প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। এজন্য ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী শাহ আলম কিরন কিছুটা সুবিধার মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে স্থানীয়দের ধারণা। বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের আওয়ামী বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নায়বুল ইসলাম বলেন, শুধু আচরণবিধি লঙ্ঘন নয়। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাতের আধারে এখনো ইউপি কার্যালয় থেকে নলকূপ ও সেনেটারি ল্যাট্রিন বিলি করছেন। এটা কেউ দেখছেন না। এই অভিযোগটি আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে আমি অবশ্যই নির্বাচিত হওয়ার আশা রাখি।বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের ধাইজান গ্রামের পাথর শ্রমিক আশরাফ আলী বলেন, আমাদের ইউনিয়নে তুমুল ভোটযুদ্ধ শুরু হয়েছে। আপাতত শান্তিপূর্ণভাবেই সবকিছু চলছে। ঠিকঠাক থাকলে নৌকার প্রার্থী এবং ধানের শীষ প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই হবে। তবে এখানে নৌকার ভোটার বেশি। কিন্তু আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। তিনি তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। আনারস প্রতীক নিয়ে আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন তিনিও আওয়ামী সমর্থক।তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ১ম দফার নির্বাচনে তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নে মোট ২৮ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীকে প্রচারণা করছেন ১৩ প্রার্থী। উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করলেও পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এছাড়া বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত ১৩ জন, ১ জন জামায়াত এবং ১ জন জাসদ সমর্থিত প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন। তিরনইহাট ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলমগীর হোসেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে আলমগীর হোসেন বলেন, কোনো পক্ষের চাপের কারণে আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিনি। এটা একান্তই আমাদের দলীয় ব্যাপার। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আমার পক্ষে কাজ না করায় দলীয় কারণেই আমি সরে এসেছি। তবে কারো ইশারা বা ইন্ধনে ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বাদ দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে কাজ শুরু করলেন তা আমি বুঝতে পারছি না।এদিকে ভজনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইমদাদুল হক বিএনপি সমর্থক ছিলেন বলে জানা গেছে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতেও তার নাম রয়েছে বলে লোকমুখে শোনা যায়। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতাবলে নৌকা প্রতীক পেয়ে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. ইমদাদুল হক। তবে মো. ইমদাদুল হক মুঠোফোনে বলেন, আমি কখনই বিএনপির রাজনীতি করিনি। কাগজে কলমে বিএনপির কোথাও আমার নাম নেই। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং আমাদের এখানে তার বাড়ি বলেই আমি তার নির্বাচন করেছিলাম মাত্র।এদিকে তেঁতুলিয়ার অন্য ৬টি ইউনিয়নেও চলছে একই কায়দায় নির্বাচনী প্রচারণা। উপজেলার ২নং তিরনইহাট ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ২৪০ জন। এখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে তাহমিদ মিল্টন, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, আনারস প্রতীক নিয়ে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম এবং বাবুল ইসলাম চশমা প্রতীক নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন। কিন্তু, বিএনপি প্রার্থী আলমগীর হোসেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এখানে নৌকা এবং আনারসের  মধ্যেই লড়াই হবে।৩নং তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৪১২ জন। এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান এবং ধানের শীষ নিয়ে সাইদুর রহমান বাবলু তুমুল প্রচারণা শুরু করেছেন। এছাড়া আওয়ামী সমর্থক জাহাঙ্গীর আলম মিঞা মোটরসাইকেল প্রতীকে, জামায়াতে ইসলামীর জাহাঙ্গীর আলম চশমা প্রতীক এবং শরীফুল্লাহ আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন। সদর ইউনিয়নে বড় দুই দল সমর্থিত প্রার্থীদের পাশাপাশি আওয়ামী সমর্থক মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের কথা বলছেন স্থানীয়রা।৪নং শালবাহান ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ২৩৮ জন। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান ধানের শীষ প্রতীক এবং নুরুল ইসলাম লালু নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফজলুর রহমান আনারস প্রতীক এবং আবদুল হাকীম অটোরিকশা প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। এখানে নৌকা এবং ধানের শীষ প্রার্থীর মধ্যে লড়াইয়ের কথা বলছেন স্থানীয় ভোটাররা।৫নং বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৭ হাজার ৯৫৫ জন। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে বাদশা সুলায়মান এবং বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে কলিম উদ্দিন নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মোটরসাইকেল প্রতীক, বিএনপির সমর্থক তারেক হোসেন চশমা প্রতীক, তজিবদ্দীন ঘোড়া প্রতীক এবং মোস্তফা জামাল আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন। স্থানীয় ভোটারদের ধারণা এখানে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হতে পারে। তবে বড় দুই দল সমর্থিত প্রার্থীরাও কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। পাল্টে যেতে পারে পরিস্থিতি।৬নং ভজনপুর ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ২শত ৯০ জন। এখানে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে যুবদল নেতা মোকসেদ আলী এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মসলিম উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি অধুষ্যিত এই ইউনিয়নে বিএনপি এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হতে পারে। তবে নৌকা প্রতীকে সাবেক চেয়ারম্যান ইমদাদুল হকও চমক দেখাতে পারেন।৭নং দেবনগর ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৮১০ জন। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীক এবং মহসিন উল হক ধানের শীষ প্রতীক ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ছলেমান আলী ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। তবে এখানে বড় দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যেই লড়াইয়ের কথা বলছেন সাধারণ ভোটাররা।এমএএস/এমএস