ছিনতাইয়ের মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর কয়েকজন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে শরীয়তপুরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২০ আগস্ট সশরীরে উপস্থিত হয়ে তাকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি এবং তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনায় শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন গ্রহণ করেননি আদালত। আদালত বলেছেন, নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন গ্রহণের সুযোগ নেই। এছাড়া উচ্চ আদালতের জামিন পাওয়া আসামিদের কারাগারে পাঠানোয় শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করেছেন।
রোববার (৬ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান মিয়া। আর পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, ছিনতাই মামলায় সাতজন আসামিকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন করাই। এ জামিনপ্রাপ্তির পরও সাতজনের মধ্যে দুইজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের নির্যাতন করে টাকা আদায় করে আদালতে সোপার্দ করেন। অন্যদিকে, আদালত জামিনের তথ্য যাচাই-বাছাই না করে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনায় পত্রিকার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে আমি আবার আদালতে উপস্থাপন করি। আদালত শুনানি নিয়ে বিচারকসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। ওই আসামিদের বিষয়টি আদালতে উপস্থাপনের পর এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৩ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশের বিষয়ে ওইদিন আবেদনকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মিয়া বলেন, একটি ছিনতাই মামলার আসামিদের শারীরিক নির্যাতন করে আহত করার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনির ও সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট।
তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের জামিনাদেশ থাকার পরও আসামিদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করা হয়। ১৬ জুলাই তাদের সশীররে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় তারা আদালতে উপস্থি হয়েছিলেন এর আগেও।
এর আগে গত ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদারকান্দি এলাকার সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ২৯ মে সাদ্দাম, বকুল, সাইদুল উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিনে নেন।
জামিনে আসার পর ৩০ মে রাতে তারা এ মামলার আরেক আসামি আনোয়ারকে নিয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জ সাদ্দামের বন্ধু আলমগীর চোকদারের বাসায় যান। ওইদিন রাতে তথ্য পেয়ে সেই বাসায় হাজির হন এএসপি রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেলসহ ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্য।
আইনজীবী মুজিবুর রহমান জানান, ২৯ মে তিন আসামিকে ৬ সপ্তাহের জামিন দেন হাইকোর্ট। পরদিন ৩০ মে আসামিদের গ্রেফতার করে মারধর করা হয়। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল উপস্থিত ছিলেন। পরদিন থানায় নিয়ে এসে আসামিদের বাবার কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়া হয় এবং নওডোবা বাজারে দুটি দোকান লিখে দিতে বলা হয়।
তিনি আরও জানান, এরপরও পুলিশ ক্ষ্যান্ত হয়নি। আসামিরা যখন পানি চান, তখন এক আসামির প্রস্রাব আরেকজনকে খাওয়ানো হয়। ১ জুন তাদের চিফ জুডিসিয়াল কোর্টে উপস্থাপন করা হয়। উচ্চ আদালতের আদেশ থাকায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উচিত ছিল জামিন দেওয়া। এটা না করে তিনি কারাগারে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ বিষয়টি নজরে আনার পর দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।
এফএইচ/এমএএইচ/জিকেএস