নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী-কাঞ্চন সড়কের পাশে স্যুয়ারেজের কয়েকশ ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ড্রেনের ৬০০ ম্যানহোলের মধ্যে অর্ধেকই রয়েছে ঢাকনাবিহীন।
এ সড়কের উভয়পাশে ছোট-বড় শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে এসব কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। ম্যানহোলে ঢাকনা না থাকায় এ সড়কটিতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক যুগের অধিক সময় ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কটির বেহাল দশা ও চলাচলের অনুপযোগী ছিল। এলজিইডি ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালের শেষদিকে রাস্তাটির কাজ শেষ করে। সড়কের রূপসী, সিটি মিলের সামনে, মুড়াপাড়া বাজার, হাটাবসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পানি নিষ্কাশন ও স্যুয়ারেজের লক্ষ্যে প্রায় সাত ফুট গভীর ড্রেন নির্মাণ করা হয়। এর সঙ্গে রাস্তার পাশের ড্রেনে ৬০০টি ম্যানহোল স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩০০টির ঢাকনা গায়েব হয়ে গেছে।
এতে করে শতকোটি টাকা ব্যয়ের রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হলেও ড্রেনের ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলগুলো এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ম্যানহোলে ঢাকনা না থাকায় সাত ফুট গভীর ড্রেনে পড়ে গত ছয় মাসে অর্ধশতাধিকের বেশি মানুষ জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আর ঢাকনাগুলো চুরি হয়ে গেছে বলে দাবি এলজিইডি কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার অভ্যন্তরে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রূপসী-কাঞ্চন সড়ক দিয়ে পাশের রূপসী, গন্ধর্বপুর, দড়িকান্দি, হাটাব, মুড়াপাড়া, হান্ডি মার্কেট, কালাদিসহ প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। সড়কের পাশে ড্রেনের ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে পথচারীদের। সড়ক বাতি না থাকায় রাতে পথচারী চলাচলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটার শঙ্কা রয়েছে।
গন্ধর্বপুর এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের শেষদিকে এই রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর রাস্তাটি পুরোদমে যানবাহন ও পথচারী চলাচল শুরু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ম্যানহোলের ঢাকনা কমতে থাকে। এখন বেশিরভাগ ম্যানহোলই ঢাকনাবিহীন হয়ে গেছে। প্রায়ই পথচারী ও অটোরিকশার চাকা ম্যানহোলের গর্তে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
মুড়াপাড়া দড়িকান্দি এলাকার বাসিন্দা নুরু মিয়া বলেন, মুড়াপাড়া বাজার এলাকায় ড্রেনে পড়ে আহত হচ্ছে বাজারে আসা লোকজন। ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় পথচারী চলাচলে সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এটির একটি সমাধান দরকার। নয়তো আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
অটোরিকশাচালক সায়েম হোসেন বলেন, প্রতিনিয়তই মানুষজন ম্যানহোলে পড়ে আহত হচ্ছে। সড়ক বাতি না থাকায় রাতে এ সমস্যা বেশি হচ্ছে।
পথচারী কাঞ্চন এলাকার বাসিন্দা জোবায়ের হোসেন বলেন, হাটাব বাজার থেকে কাঞ্চন এলাকায় সড়কে ড্রেনের ম্যানহোলের বেশকিছু ঢাকনা নেই। এ কারণে ড্রেনে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পথচারীরা। এ পর্যন্ত এ প্রায় ১৫ জনের মতো নারী-পুরুষ ও শিশু ড্রেনে পড়ে আঘাত পেয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তা সংস্কারের সঙ্গে ড্রেনের ম্যাহোলের ঢাকনাগুলো যথাযথভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। এরইমধ্যে তিন শতাধিক ঢাকনা চুরি হয়ে গেছে। এজন্য রূপসী-কাঞ্চন সড়কে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ম্যানহোলের ঢাকনাগুলোকে কিভাবে স্থাপন করলে চুরির কবল থেকে রক্ষা করা যাবে এ বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
এমআরআর/এমএস