দেশজুড়ে

গ্রামপুলিশের ‘অত্যাচারে’ অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী, বেচতে চান ভিটেমাটি

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় আবুল হাসেম নামে এক গ্রামপুলিশের ‘অত্যাচারে’ অতিষ্ঠ হয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে গ্রাম ছাড়তে চাচ্ছেন ব্যবসায়ী অলি উদ্দিনের পরিবার। তারা দুজনই বুড়িরচর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আবুল হাসেম ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামপুলিশ সদস্য। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তিনি আত্মীয়দের দিয়ে প্রতিনিয়ত ওই পরিবারকে নির্যাতন করে যাচ্ছেন বলে এলাকাবাসীও অভিযোগ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সাগরিয়া বাজারে অলি উদ্দিনের সোনার গহনা মেরামতের দোকান আছে। তার পাশের বাড়ির গ্রামপুলিশ আবুল হাসেমের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় তিনি বিভিন্নভাবে অলি ও তার পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা করে আসছেন।

এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও প্রতিপক্ষ গ্রামপুলিশ হওয়ায় কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। পরে আদালতে মামলা করলে বিচারক তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী অলি উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গ্রামপুলিশের লোকজন হামলা চালিয়ে লাথি মেরে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর ভ্রূণ নষ্ট করে দিয়েছে। আমার মাকে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছে। আমার শিশু সন্তানকে পিটিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছে। এখন নিরাপত্তার জন্য আমার স্ত্রী-সন্তানকে শ্বশুরবাড়ি রেখেছি। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আমরা নিরুপায় হয়ে সবকিছু বিক্রি করে এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করছি।

অলি উদ্দিনের স্ত্রী তানিয়া বেগম জাগো নিউজকে বলেন, একদিন ঘরে আমি একা ছিলাম। তিন-চারজন সন্ত্রাসী ঘরে প্রবেশ করে আমাকে পিটিয়ে আহত করে। তাদের লাথিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা করার পর এখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিনিয়ত রাতের অন্ধকারে হামলা করছে। ইটপাটকেল মেরে ঘরের দরজা জানালা-ভাঙচুর করছে। আমাদের কারও নিরাপত্তা নাই।

মো. জামসেদ নামে এক প্রতিবেশী বলেন, হামলার বিষয়টি এলাকার সবাই জানে। দীর্ঘদিন থেকে দুই পরিবারের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ সমাজপতিরা দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও দুই পরিবারের বিরোধ মীমাংসা করতে পারেনি। এর একটি বিহিত করা জরুরি।

এ বিষয়ে গ্রামপুলিশ আবুল হাসেম জাগো নিউজকে বলেন, অলিদের সঙ্গে বাড়ির অংশ নিয়ে বিরোধ আছে সত্যি। তবে রাতের অন্ধকারে কে বা কারা তাদের ঘরে হামলা করে তা আমার জানা নেই। এ হামলার ঘটনায় আমার পরিবারের কেউ জড়িত নয়। আমিও চাই অলি আমার সব সম্পত্তি কিনে নিয়ে যাক। আমি পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যাবো।

বুড়িরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। রাতের আঁধারে হামলার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে অলি উদ্দিন। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে দেখতে না পাওয়ায় মীমাংসা করা যায়নি। তবে শান্তির স্বার্থে এ বিরোধ মীমাংসা করা উচিত। আমরা আবারও চেষ্টা করবো।

জানতে চাইলে পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, তানিয়া বেগমের করা অভিযোগটির তদন্ত চলছে। বাদীর গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট হওয়ার ঘটনায় হাসপাতালের মেডিকেল সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এমআরআর/এএসএম