ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস আজ। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে ২৮ বছর। ১৯৯৫ সালে পুলিশ সদস্যের হাতে ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল কিশোরী ইয়াসমিন। সেই নির্মম ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী মো. আব্দুর রহিম সরকার (৬৪)। বিভিন্ন জেলায় সাক্ষী দিতে গিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। তার খবর রাখেননি কেউ। এখন ছোট এক চায়ের দোকানই তার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ বাজারে মাছ হাটিতে চায়ের দোকানে কথা হয় আব্দুর রহিম সরকারের সঙ্গে। তিনি ইয়াসমিন ধর্ষণ, হত্যা ও মামলার স্মৃতিচারণের সময় দুঃখ করে বলেন, যতদিন মামলা ও তদন্ত চলেছিল ততদিন আমার খোঁজ নিয়েছে পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। আর খবর রেখেছিলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য এম আব্দুর রহিম। সে সময় আদালত ছাড়াও বিভিন্ন জেলার এসপি এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আমার সাক্ষী নিয়েছেন। সাক্ষী দেওয়ার জন্য আমাকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে। নির্মম এ ঘটনার পরবর্তী আট বছরে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।
আরও পড়ুন: ২৮ বছরেও পূরণ হয়নি হতাহতদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি আব্দুর রহিম সরকার বলেন, আমি দশমাইল মোড়ে জয়নুল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ছিলাম। সেখানেই আমার পাঁচটি দোকান পজিশন নেওয়া ছিল। ইয়াসমিন ধর্ষণ, হত্যা মামলার সাক্ষী দিতে গিয়ে আমি ঠিকমত কাজ করতে না পারায় প্রথমে চাকরি হারাই, পরে একে এক সব দোকানের পজিশন বিক্রি করতে হয়। পরে কাহারোল উপজেলার গড়নরপুরের বসবাসের বাড়িটিও বিক্রি করে ফেলি। বর্তমানে আমি বীরগঞ্জ উপজেলার পুরাতন বাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকি এবং চা বিক্রি করে কোনো রকম সংসার চালাই।
তিনি আরও বলেন, রংপুরে মামলা চলাকালে প্রয়াত সংসদ সদস্য এম আব্দুর রহিম আমাকে রংপুরে আনা-নেওয়া করতো। তিনি মামলার দিন একটি বাস ভাড়া করে সাক্ষী ও ইয়াসমিনের পরিবারসহ যারা যেতে চাইতো তাদের রংপুরে নিয়ে যেতেন। দুপুরে খাওয়াতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত কেউ আমার খবর নেননি। তখন অনেকে আমার কাছে টাকা নিয়ে এসেছিল। আমাকে ভয়, লোভ-লালসা দেখিয়ে কিনতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি বিক্রি হয়নি, ভয় পাইনি। অনেকেই বিক্রি হয়ে গেছেন, আদালত তিন ভিআইপি সাক্ষীকে বৈরি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আমি দিনাজপুর বাসীর সঙ্গে প্রতারণা করিনি।
আরও পড়ুন: ইয়াসমিন ট্র্যাজেডির ২১ বছর পরও থেমে নেই নারী নির্যাতন
১৯৯৫ সালের এই দিনে ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন দিনাজপুরে কয়েকজন বিপথগামী পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হন সাতজন। তারপর থেকেই সারাদেশে এই দিনটি ‘ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। দীর্ঘ ২৮ বছরে ইয়াসমিন, সামু, সিরাজ, কাদেরসহ নিহতদের পরিবারগুলো সরকারিভাবে তেমন সুযোগ-সুবিধা পায়নি। নিহতদের পরিবারকে তৎকালীন বিএনপি সরকার চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সেদিন মধ্য রাতে পঞ্চগড় গামী হাসনা এন্টার প্রাইজ কোচের সুপার ভাইজার দশমাইল মোড়ে জাবেদ আলীল পান দোকানে ইয়াসমিনকে নামিয়ে দিয়ে যায়। পরে লোকজন ইয়াসমিনকে জয়নুল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার আব্দুর রহিম সরকারের কাছে জিম্মা দেয়। সেখান থেকে ভোরে পুলিশ ইয়াসমিনকে দিনাজপুর শহরের রামনগর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোর করে পুলিশভ্যানে তুলে নেয়। পরে ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে তারা।
এমদাদুল হক মিলন/জেএস/এএসএম