সাগর থেকে চাঁদপুর বড়স্টেশন মৎস্যঘাটে প্রচুর ইলিশ আসছে। ট্রলার ও ট্রাক থেকে মণে মণে ইলিশ নামিয়ে স্তূপ করছেন শ্রমিকরা। যদিও ভরা মৌসুমে ঘাটে পদ্মা-মেঘনার ইলিশের দেখা নেই বললে চলে। অল্প সংখ্যক নদীর ইলিশ এলেও দাম চড়া। ফলে আসল রুপালি ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
আড়ত থেকে খুচরা বাজার কিংবা টুকরিতে করে পাড়া-মহল্লায় যে মাছ বিক্রি হচ্ছে তাতে দামের পার্থক্য ২০০-৩০০ টাকা। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে বড়স্টেশন অবতরণকেন্দ্রে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর মাছঘাটে কমেছে ইলিশের সরবরাহ।
অন্যদিকে ভরা মৌসুমেও ইলিশের চড়া দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, মাছের সরবরাহ যথেষ্ট হলেও ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না। মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে ইলিশ।
চট্টগ্রাম থেকে আসা নাহিদ ও কুমিল্লা থেকে আসা রাশেদুল ইসলাম বলেন, এখান থেকে আমাদের এলাকায় ইলিশের দাম আরও কম। আমরা মাছঘাট ঘুরে দেখলাম একেক জায়গায় একেক রকম দাম। এখানে শুধু পুরোনো মাছগুলোর দাম কম রাখে। আর সব ইলিশের দাম বেশি। নদীর ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে।
ক্রেতা মনির হোসেন মান্না বলেন, ব্যবসায়ীরা সাগরের ইলিশ নিয়ে ব্যস্ত। নদীর মাছগুলো তেমন নেই। দেশীয় মাছ আছে, সেগুলো চাষের। এছাড়া ইলিশের দামও চড়া। এ সময় বড়স্টেশন মাছঘাটে শুধু নদীর মাছ পাওয়া যেত। আর এখন নদীর কোনো মাছ নেই। ব্যবসায়ীরা বলছে, নদীর মাছ অন্যত্র নিয়ে যায়। মূলত ইলিশে ব্যবসা ভালো। তাই সবাই ইলিশ নিয়ে ব্যস্ত।
মাছ ব্যবসায়ী বিপ্লব খান বলেন, এখানে আগে ইলিশের পাশাপাশি নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন আর দেখা যায় না। কোনো কোনো মৌসুমে পাঙ্গাস, পোয়া ও চিংড়ি পাওয়া যেত। সেটাও কম। শুধু মাত্র সাগরের ইলিশে সরবরাহ হচ্ছে চাঁদপুরের এ মাছঘাটে।
মাছঘাটে শ্রমিক জাকির জানান, এখানে সব অঞ্চলের ইলিশ আছে। ছোট, বড় ও মাঝারি আকৃতির ইলিশ ধরা পড়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন জেলেরা। মাছের সরবরাহ থাকলেও চাহিদা প্রচুর। চাঁদপুর থেকে ঢাকা, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ উত্তরবঙ্গেও পরিবহনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে ইলিশ। এর কারণেই দাম একটু বেশি।
ইলিশ ব্যবসায়ী হাসান মিজি বলেন, চাঁদপুরের অরজিনাল রুপালি ইলিশ চারটি ভাগে ভাগ করে বিক্রি হয়। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৫-১৭০০ টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা। আর ছোট সাইজের ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ হাজারের ওপরে বিক্রি হয়। মাছঘাটে ইলিশ কিনে কিছু বিক্রেতা আবার আলাদা বসেন। তারা যার কাছ থেকে যেমন বিক্রি করতে পারেন। মূলত চাঁদপুরে ইলিশের প্রচুর চাহিদা কিন্তু ইলিশ কম।
তিনি আরও বলেন, এখন সাগরের ইলিশ আসছে বেশি। এখানে কোনো সিন্ডিকেট থাকার কথা না। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, এখন সাগরের ইলিশে একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন ৫০০-১০০০ মণ ইলিশ উঠছে ঘাটে। আবার হঠাৎ করেই সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম কমছে না। মাছের আমদানি বেশি হলে দাম একশ-দেড়শ টাকা কমে। আর আমদানি কম হলে দাম বাড়ে। সাইজ ছোট হওয়ায় এবার শীতেও ইলিশ মিলতে পারে।
এ মৎস্য নেতা আরও বলেন, চাঁদপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখান থেকে ইলিশ পাঠানো হয়। তবে এখন আর বিদেশে রপ্তানি করা হয় না। দেশেই প্রচুর চাহিদা আছে। এবার ইলিশ কম থাকায় ডিমের দামও বেশ চড়া।
চাঁদপুর জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, ইলিশের দাম নিয়ে অনেক অভিযোগ আসছে। সহসাই বড়স্টেশন মাছঘাটে একটি অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এসজে/এমএস