দেশজুড়ে

স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগে তৈরি সেতুতে দুই গ্রামের মানুষের সেতুবন্ধন

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চুনা খালের ওপর স্বেচ্ছাসেবী যুবকদের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ১৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সেতু। আর এই সেতুটির মাধ্যমে স্থাপিত হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ চুনা গ্রামের মানুষের সেতুবন্ধন। কষ্ট লাঘব হয়েছে হাজার হাজার পথচারীর। শিক্ষার্থীরা এখন নির্বিঘ্নে যেতে পারছে বিদ্যালয়ে।

সেতুটি তৈরির আগে পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাম দুটির এ পারের মানুষ ওপারে যেতে পারত না। রোগীদের হাসপাতাল নিয়ে যেতে ঘুরে আসতে হতো আট কিলোমিটার রাস্তা। এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যরা। স্বেচ্ছাশ্রমে তারা তৈরি করেন কাঠের সেতুটি।

১৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৫ ফুট প্রস্থের সেতুটির দুইপাশে দেওয়া হয়েছে রেলিং। এর ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারছেন। এছাড়া এ সেতু পাল্টে দিয়েছে গ্রামীণ জনপদের চিত্র। বিশেষ করে কৃষকরা সহজেই তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন।

সেতুটি ঘিরে উৎসবের আমেজ বইছে এলাকাবাসীর মধ্যে। প্রতিদিন বিকেলে গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে সেতুটি পরিদর্শনে আসছেন শত শত মানুষ। সেতুটিতে উঠে ছবি তুলে পোস্ট করছেন ফেসবুকে।

স্থানীয় শিক্ষার্থীরা জানায়, আগে দুটি বাঁশের ওপর দিয়ে পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো। এতে ঝুঁকি থাকায় অনেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। অনেক শিক্ষার্থীর বই-খাতা খালের পানিতে ভিজে যেত। এখন তারা সেতু দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার তরফদার জাগো নিউজকে বলেন, এটি নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থী, কৃষকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সুবিধা হয়েছে। এখন উপজেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।

চুনা হেতালবুনিয়া বাইতুল নুর জামে মসজিদের সভাপতি আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, সেতুটি হওয়ায় এলাকার দুপাড়ের মানুষ নির্বিঘ্নে মসজিদে যাতায়াত করতে পারছে। আগে জুম্মার নামাজেও মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক কম, এখন বেড়েছে। এছাড়া এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে সাইকেল, ভ্যান, মোটরসাইকেল পারাপার না করতে পারায় কোনো মানুষ অসুস্থ হলে সাত থেকে আট কিলোমিটার ঘুরে আসতে হতো। এখন আর সেই সমস্যা নেই।

তিনি বলেন, সেতুর কারণে মানুষের সময়, শ্রম কমেছে। আগে উপজেলা সদরে উঠতে যে সময় লাগতো এখন তার চেয়ে অর্ধেক সময়ে মানুষ পৌঁছাতে পারছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের গাজী আল ইমরান জাগো নিউজকে বলেন, একটি ছোট্ট উদ্যোগ হাজারো মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারে যা এই সেতুটির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে আমাদের সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধনে সেতুটি তৈরি করেছি।

আহসানুর রহমান রাজীব/এমআরআর/এএসএম