দেশজুড়ে

নির্মাণের ১০ বছরেও সেবা মেলে না ৩ কোটি টাকার ট্রমা সেন্টারে

এক দশকেও চিকিৎসাসেবা চালু হয়নি হবিগঞ্জের বাহুবলে অবস্থিত ট্রমা সেন্টারে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির লাইন স্থাপন নিয়ে গণপূর্ত ও স্বাস্থ্য বিভাগের টানাটানিতে কেটে গেছে দীর্ঘ ১০ বছর। আর এখন চালু করা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে। ফলে ভবন নির্মাণ শেষ হলেও এর সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলাবাসী।

সামান্য হাত-পা ভাঙলেই যেতে হচ্ছে ঢাকা কিংবা সিলেটে। এতে যেমন বাড়ছে ব্যয়, তেমনি পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে।

সরেজমিন ঘুরে ও স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের উন্নত ও দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ২০১০ সালে ফিজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় বাহুবলে ট্রমা সেন্টার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তিন কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন স্থানে ১০ শয্যাবিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারটি ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয়।

আরও পড়ুন: ২ মন্ত্রীর দু’বার উদ্বোধনের পরও অচল ট্রমা সেন্টার!

২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনেক কাজ বাদ রেখেই গণপূর্ত বিভাগ ভবনটি হবিগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করতে চায়। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও ভবনে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ না থাকায় সেটি বুঝে নিতে অপারগতা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। দুই দপ্তরের চিঠি চালাচালিতেই কেটে যায় ১০ বছর। অবশেষে গত বছরের শেষার্ধে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামোগত সংস্থার কাজ সম্পন্ন করা হয়।

গত ২ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত বিভাগ থেকে ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে পায় স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ১১ জুন হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মে. শাহনওয়াজ ট্রমা সেন্টারটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল কিংবা যন্ত্রপাতি না থাকায় তা চালু করা যাচ্ছে না। এরইমধ্যে চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্রও দেওয়া হয়েছে। এ ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের ঢাকা বা সিলেটে যেতে হবে না।

বাহুবলের নারিকেলতলা গ্রামের বাসিন্দা মোবাশ্বির আহমেদ বলেন, আমরা জেনেছি বাহুবলে একটি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু ১০ বছর হয়ে গেলেও বিল্ডিংটিতে কোনো কার্যক্রম নেই। আমরা বুঝতেই পারছি না আসলে এটি কিসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষের কোনো কাজে আসছে না।

আরও পড়ুন: তিন বছর ধরে পড়ে আছে ২ কোটি টাকার ট্রমা সেন্টার

দৌলতপুর গ্রামের লুৎফুর রহমান বলেন, ট্রমা সেন্টারটিতে এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। শুধু করোনা ভ্যাকসিন ও ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়। আর কিছুই না।

আরাচাঁন বিবি বলেন, এটি যদি চালু হতো তবে আমরা গরিব মানুষ বেঁচে যেতাম। আর ঢাকা বা সিলেটে হাত পা ভাঙার চিকিৎসার জন্য যেতে হতো না।

দুর্ঘটনার শিকার জাঙ্গালিয়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম মানিক বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ এটিকে পঙ্গু হাসপাতালই বুঝি। আমি দুর্ঘটনায় পা ভেঙেছি। যদি এটি চালু হতো তবে আমার সিলেট বা ঢাকা যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। এটি নেতাকর্মীদের ব্যর্থতার কারণে চালু হয়নি। যদি এটি চালু হতো জেলাবাসী সেবা পেতো।

বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বাবুল কুমার দাশ বলেন, ট্রমা সেন্টারটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বাহুবল হাসপাতাল এলাকায় অবস্থিত। সরকার প্রতিটি ট্রমা সেন্টারই মহাসড়কের পাশে নির্মাণ করেছে। এর উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য। সে হিসেবে যেহেতু বাহুবল মহাসড়কের পাশে এখানে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে। এটি চালু হলে দুর্ঘটনায় যে যাত্রীরা আহত হন তাদের সেবা আরও ভালোভাবে দেওয়া সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন: ১৬ বছর পর প্রাণ ফিরলো ফেনী ট্রমা সেন্টারে

তিনি বলেন, ট্রমা সেন্টারটি আমরা গণপূর্ত বিভাগ থেকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বুঝে পেয়েছি। পরবর্তীতে আমরা প্রশাসনিক অনুমোদন ও জনবল নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। এটি মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আমরা ট্রমা সেন্টারটি চালু করতে পারবো।

জেলার মাধবপুর থেকে নবীগঞ্জ উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার জুড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক রয়েছে। এ মহাসড়কে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহতদের প্রতিনিয়ত সিলেট অথবা ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু অনেকের পক্ষেই আর্থিক কারণে ঢাকা-সিলেট নিয়ে দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। বাহুবলে ট্রমা সেন্টারটি দ্রুত চালু হলে এসব রোগী হাতের কাছে চিকিৎসাসেবা পাবে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এমআরআর/এমএস