টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া নবজাতকের ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে বলে চেম্বার জজ আদালতকে জানিয়েছেন আইনজীবী। ধর্ষণ মামলার আসামি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের আইনজীবী আদালতকে এ তথ্য জানান।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সঙ্গে আদালত বড় মনিরের আবেদন কার্যতালিকা (কজলিস্ট) থেকে বাদ দেন।
এর আগে গত ২১ আগস্ট হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে মর্মে আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় সেটি চেম্বার জজ আদালতে জানানো হয়।
আদালতে এদিন বড় মনিরের আইনজীবী সারোয়ার আহমেদ বলেন, ‘চেম্বার আদালত নবজাতকের ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের তথ্য জানানো হয়েছে যে ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। তাই, আমরা বড় মনিরের জামিন প্রার্থনা করছি।’
তখন চেম্বার জজ আদালত বলেন, ‘এ বিষয়টি এখন আর চেম্বার আদালতে নেই। আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আগামী ৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এ মুহূর্তে চেম্বার আদালতে শুনানির সুযোগ নেই।’ পরে আদালত বড় মনিরের আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।
এর আগে গত ২১ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ জামিন স্থগিতের আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। বড় মনিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট এম. সাঈদ আহমেদ রাজা।
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, বড় মনির প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিচার চাইতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। নবজাতকের ডিএনএ টেস্ট করতে নমুনা সংগ্রহে সহযোগিতা করছেন না বিবাদীপক্ষ।
এসময় আপিল বিভাগ আসামিপক্ষের আইনজীবীকে নবজাতকের ডিএনএ টেস্ট করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন।
ধর্ষণ মামলায় গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন গত ১২ জুলাই স্থগিত করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকের ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন আদালত। পরবর্তী শুনানি ও ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২১ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত।
এর আগে গত ১১ জুলাই বিচারপতি শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বড় মনিরকে জামিন দেন। পরে জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৫ এপ্রিল দিনগত রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলায় ধর্ষণের কারণে নারীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। মামলায় বড় মনির ও তার স্ত্রী নিগার আফতাবকে আসামি করা হয়। পরে ভুক্তভোগী নারীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রমাণ পায় মেডিকেল বোর্ড। ভুক্তভোগী নারী গত ৬ এপ্রিল আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে ওই নারী নবজাতকের জন্ম দেন।
মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেন, গোলাম কিবরিয়া তার পূর্বপরিচিত। গত ১৭ ডিসেম্বর তাকে শহরের আদালত পাড়ায় নিজের বাড়ির পাশের একটি ভবনে গোলাম কিবরিয়া ডেকে নেন। সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন ও আপত্তিকর ছবি তুলে রাখেন। পরে আপত্তিকর ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন তিনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, একপর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া জানার পর সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তবে ভুক্তভোগী কিশোরী রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ তাকে শহরের আদালত পাড়ায় গোলাম কিবরিয়ার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে ওই কিশোরীকে গোলাম কিবরিয়া আবার ধর্ষণ করেন।
গত ১৫ মে ধর্ষণ মামলায় বড় মনিরের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল মহসীনের আদালত।
গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই। তিনি জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব।
এফএইচ/কেএসআর