দেশজুড়ে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রতি মাসে অন্তত একবার পণ্য নিচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সলপ ইউনিয়নের এক হাজার ৪৩৬ নিবন্ধিত কার্ডধারী সম্প্রতি পণ্য সংগ্রহ করতে যান। তাদের অভিযোগ, ভর্তুকি মূল্যে পণ্য কিনতে গিয়েও বিড়ম্বনার শেষ নেই।
ক্রেতাদের অভিযোগ, পণ্য সলপ ইউনিয়ন পরিষদে বিক্রি না হয়ে, হচ্ছে সলপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। এতে বেশি ভাড়া দিয়ে এসে পণ্য নিতে হয়। শুধু তাই নয়, পণ্য নিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে পাননি।
টিসিবির নিয়ম অনুযায়ী, কার্ডধারী একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি চাল ৪৭০ টাকায় কিনতে পারবেন। এ ছাড়া প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা ও প্রতি কেজি চালের দাম ৩০ টাকা দরে নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন> প্রতিকেজি ১৫ টাকা/টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডে মিলবে চালও
শনিবার ক্রেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে দেখা যায়, সলপ ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে সোনতলা মোড় সলপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। কার্যালয়ের সামনেই রাস্তার উপরে নিম্নআয়ের ক্রেতাদের প্রখর রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
মাহাতাব সরকার নামে এক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, সকালে ১৫ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে সোনতলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গিয়ে রোদের মধ্যে দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এরপর ৪৭০ টাকায় ৫ কেজি চাল ও দুই কেজি তেল পেয়েছি। দুই কেজি ডাল দেওয়ার কথা থাকলেও আমাকে দেয়নি। পরে ডিলারের কাছে ডাল চাইতে গেলে বলে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এসব পণ্য টাকা দিয়ে কিনতে এসে যদি সারাদিন ব্যয় করতে হয়, তাহলে কী আমাদের পেট চলবে।
গোলজার হোসেন নামে আরেক ক্রেতার অভিযোগ, সেই সকাল থেকে ১২টা পর্যন্ত রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদে দিলে আমাদের এতো কষ্ট হতো না।
আরও পড়ুন> ২০ মার্চ থেকে ‘ফ্যামিলি কার্ডে’ কোটি পরিবার পাবে টিসিবির পণ্য
নাম প্রকাশ না শর্তে স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে টিসিবির পণ্য বিক্রি করাতে মহিলা ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রখর রোদে তাদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
এই ইউনিয়নে টিসিবি পণ্য বিক্রি করছেন ডিলার মেসার্স মার্জিয়া ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী মাসুদ রানা। তিনি মশুর ডাল না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, পণ্য কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে একজন মশুর ডাল পাইনি বলে জানিয়েছিল। আমি তাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলাম।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে পণ্য বিক্রি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উপজেলা থেকে আমাদের যেখানে পণ্য বিক্রি করতে বলে, আমরা সেখানেই বিক্রি করি।
পণ্য বিক্রির তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আল্লামা ইকবাল জাগো নিউজকে বলেন, সলপ ইউনিয়নে মোট ১ হাজার ৪৩৬টি ফ্যামিলি কার্ড রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘ লাইন হয়। তবে আগে ইউনিয়ন পরিষদেই পণ্য বিক্রি করা হতো। ইউএনও-র নির্দেশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকত ওসমান জাগো নিউজকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে টিসিবির পণ্য বিক্রি করায় সিংহভাগ কার্ডধারীর গাড়ি ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত টাকা ও সময়ের ব্যয় হচ্ছে। এ কারণে অনেকেই ভর্তুকি মূল্যে পণ্য পেয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।
এ প্রসঙ্গে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এমন ভোগান্তির বিষয়টি আমার জানা নেই, আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএনআর/জেআইএম