দেশজুড়ে

যেভাবে চিনবেন চাঁদপুরের নদীর ইলিশ

ইলিশের রাজধানী বলা হয় চাঁদপুরকে। যার কারণে দেশের প্রথম ব্র্যান্ড জেলা হিসেবেও স্বীকৃতি পায় চাঁদপুর। নামকরণও করা হয় ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে। ইলিশের বাড়ি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান প্রতিদিন শত শত মানুষ চাঁদপুর ইলিশ ঘাটে আসেন। বড়স্টেশন মাছঘাটে এসে প্রথমেই ক্রেতারা দুশ্চিন্তায় পড়েন আসল ইলিশ চিনতে গিয়ে। অনেকেই না চিনে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশের বদলে কিনে নেন দক্ষিণাঞ্চল কিংবা সাগরের ইলিশ। ফলে নদীর ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হন তারা।

মূলত আড়ত কিংবা বাজারে ক্রেতারা প্রথমেই খোঁজেন চাঁদপুরের পদ্মা নদীর ইলিশ। এই অঞ্চলের মিঠা পানির ইলিশের স্বাদ অনন্য।

চাঁদপুরের নদীর ইলিশ চেনার উপায় প্রসঙ্গে কথা হয় ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, আসল রুপালি ইলিশ ব্যবসায়ী আর জেলেরাই চিনে থাকেন। খুব কমসংখ্যক ক্রেতা রুপালি ইলিশ চেনেন। তবে একটু ভালোভাবে দেখলেই সাগরের ইলিশ আর নদীর ইলিশ সহজেই পার্থক্য করা যাবে। নদীর ইলিশে উজ্জ্বলতা বেশি থাকে এবং রুপালী রঙের হয়। এছাড়া পরিবেশের কারণে ইলিশের স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা থাকে।

এই ইলিশ গবেষক জানান, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুটির উজ্জ্বলতা এবং স্বাদ একই। মিঠাপানি অর্থাৎ পদ্মা ও মেঘনার পরিবেশ এবং খাদ্যের মান ভালো থাকায় এখানকার ইলিশ স্বাদেও ভিন্ন। প্রচলিত কারণে সবাই পদ্মার ইলিশ বলে। মূলত পদ্মা-মেঘনা দুই নদীর ইলিশের স্বাদ একই।

অন্যদিকে সাগরের ইলিশের স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাসগত পরিবর্তন থাকে। যার কারণে সেখানকার ইলিশে উজ্জ্বলতা কম থাকে ও শরীরে লালচে ভাব থাকে এবং ধূসর বর্ণের হয়। এই ইলিশের শরীরে যে মাংসপেশী তৈরি হয় সেখানে পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশের সঙ্গে গঠনগত পার্থক্য থাকে।

চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন বলেন, চাঁদপুরের ইলিশের রঙ সিল্কি হয়। চোখগুলো সাদা হয়। এছাড়া ডিম পাড়ার স্থানে লোড লোড থাকবে এবং ডিম কম থাকবে। পদ্মা-মেঘনার ইলিশ হাত দিয়ে ধরলে বেঁকে যায় না। এই ইলিশের স্বাদ একেবারেই ভিন্ন। অন্যদিকে সাগরের ইলিশের কালার লালছে রঙের হয়। হাত দিয়ে ধরলে বেঁকে যায়। ইলিশের উজ্জ্বলতা থাকবে না। যারা না চেনে না তারা কখনোই বুঝবে না কোনটা সাগরের আর কোনটা নদীর।

গুল্টিজালের জেলে রফিক মোল্লা বলেন, আমরা গুল্টিজাল দিয়ে ইলিশ ধরি। এই জালে শুধু বড় বড় ইলিশ আসে। পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশের রঙ একেবারেই আলাদা। এই ইলিশ বরফে রেখে দিলেও রঙ নষ্ট হয় না। একটা রুপালি সিল্ক থাকে। চোখ-মুখ ও কাঁধের গঠনও আলাদা। আর সাগরের ইলিশ লালচে রঙের হয়। ১০-১৫ দিন ট্রলারে রাখার কারণে কালার আরও নষ্ট হয়ে যায়। নদী আর সাগরের ইলিশ একসঙ্গে নিলে বোঝা যাবে কোনটা নদীর আর কোনটা সাগরের। আমরা মুখে বলে ঠিকভাবে বোঝাতে পারবো না, এটা অভিজ্ঞতার বিষয়।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত শরকার বলেন, সাগর ও নদীর ইলিশের স্বাদ একেবারেই ভিন্ন হয়। মেঘনার পানি কালো আর পদ্মার পানি সাদা, এই দুই কালার মিলে চাঁদপুরের রুপালি ইলিশ। আর সাগরের ইলিশের শরীর ঘোলা আর লাল বর্ণের হয়। এটি ব্যবসায়ীরা সহজে চেনেন, সাধারণ মানুষ চিনবে না। যার কারণে অনেকেই না চিনে সাগরের ইলিশ কিনে নিয়ে যান। যারা অরিজিনাল ইলিশ কেনেন, তারা বার বার কিনে নিয়ে যান। কারণ এটার স্বাদ আলাদা। সব সময় চাহিদা থাকে, তাই দামও বেশি। অনেকেই হাত দিয়ে ধরে ইলিশ চেনার চেষ্টা করেন। আসলে হাত দিয়ে ধরে ইলিশ চেনার উপায় নেই। এটা অভিজ্ঞতার বিষয়। এফএ/এএসএম