সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে রেললাইনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি। সেইসঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও চুনা পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প খরচে পাঠাতে না পারায় বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তবে রেলপথের এসব মালামাল চুরির বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। বরং রেলপথটি মেরামতে ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে দেশ-বিদেশে শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিতি পায় ছাতক উপজেলা। ফলে ব্যবসার প্রসারে ১৯৫৪ সালে ছাতক-সিলেটে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি স্থাপিত হয়। প্রতিদিন সকাল-দুপুর-রাত মিলিয়ে ছাতকবাজার রেলস্টেশন থেকে চারটি ট্রেন প্রায় ৪৫ মিনিটে সিলেটে পৌঁছাতো। এতে ভাড়া গুনতে হতো ১০ টাকা। এছাড়া মালামাল পরিবহনের চারটি ট্রেনে সিমেন্ট, পাথর, চুনাপাথর, ধান, তেজপাতা ও কমলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল কমখরচে পরিবহন করা হতো। যার সুফল ভোগ করছিলেন এই অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রথম দফায় বিধিনিষেধের কারণে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে সারাদেশের সঙ্গে বন্ধ হয় ছাতকের এই ট্রেন চলাচল। তবে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ট্রেন চলাচল পুনরায় চালু হলেও ছাতকে আর ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। সেইসঙ্গে ২০২২ সালের ১৬ জুনের ভয়াবহ বন্যায় ছাতক রেললাইনের প্রায় ১০ কিলোমিটার রেলপথ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা এখনো মেরামত করা হয়নি।
এদিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে স্টেশনের ভবনটি। এমনকি নষ্ট হচ্ছে স্টেশনে পড়ে থাকা সরকারি মূল্যবান মালামাল। জং ধরে রেলপথের একপাশে পড়ে আছে মালবাহী তিনটি গাড়ি। বন-জঙ্গলে ঢেকে গেছে রেললাইন।
এছাড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই রুটে যাতায়াতকারী ওই অঞ্চলের লাখো মানুষ। বাড়তি টাকা দিয়ে ছাতক উপজেলা থেকে সিলেটে যেতে একদিকে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, অন্যদিকে ১০ টাকার ভাড়ায় গুনতে হচ্ছে ১০০ টাকা।
অপরদিকে রেললাইন দিয়ে তিন বছর ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে রেল বিভাগের মূল্যবান মালামাল ও যন্ত্রপাতি। এরইমধ্যে লাইনের স্লিপার, নাটবল্টু, মাল গাড়ির চাকা ও কাঠ ব্যাপকভাবে চুরি হয়েছে।
মমতাজ আলী দীর্ঘ ৯ বছর ধরে রেলওয়ের ‘কি ম্যান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কাগজে কলমে তার হাজিরা সিলেটে হলেও তিনি ২৫ আগস্ট থেকে রাতভর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাতকের রেললাইনে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও থামছে না রেললাইনের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরি। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারাও চুপ করে বসে আছেন।
মততাজ আলী জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন রাতে রেলের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরি হচ্ছে। আমরা যতটুকু পারি রক্ষা করার চেষ্টা করি। এরইমধ্যে ৪ কোটি টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তবে রেলের দায়িত্বে থাকা মো. মাহবুবুল আলম কোনো মালামাল চুরি হচ্ছে না দাবি করে বলেন, দ্রুত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এই অঞ্চলে আবারো ট্রেন চলাচল শুরু হলে এখানকার অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
ছাতক বাজার রেলওয়ের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজ জিন্নাত জাগো নিউজকে বলেন, রেলপথের কোনো মালামাল চুরি হয়নি, বন্যায় ভেসে গেছে। রেলপথ মেরামত করার জন্য ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন বছরের শুরু থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
এফএ/জিকেএস