দেশজুড়ে

ভ্যাকসিন সংকটে চিকিৎসা বঞ্চিত কুকুরে কামড়ানো রোগীরা

ফেনীর সোনাগাজীতে বেওয়ারিশ ও পাগলা কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। গত তিন মাসে পাগলা কুকুরের কামড়ে অন্তত ৫৫০ জন আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর এরমধ্যেই গত পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মো. সাদেকুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলায় জুলাই মাসে ১২৬ জন, আগস্ট মাসে ২৭৩ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৬ এবং চলতি মাসের গত পাঁচ দিনে কুকুরের কামড়ে ১৫ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত তিনমাস ধরে হঠাৎ করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। সব বয়সী মানুষ কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে স্থানীয়দের মধ্যেও কুকুরের কামড়ের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত তিন মাস পাঁচ দিনে কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে অন্তত ৫৫০ জন এবং সাপের কামড়ে ২০ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কুকুরের কামড়ে আহত চারজন রোগী হাসপাতালে যান। তবে কুকুরের কামড়ের বিষক্রিয়া থেকে হওয়া র্যাভিস রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় আগতদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ২৫০ শয্যা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলার চর সোনাপুর এলাকার ফাতেমা আক্তার বলেন, বুধবার দুপুরে মাদরাসা থেকে তার ছেলে চিপস খেতে খেতে বাড়ির উঠানে আসে। ঘরে ঢুকার আগ মুহূর্তে হঠাৎ একটি কুকুর এসে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ডান হাতে কামড় দিয়ে টেনে তাকে মাটিতে ফেলে চিপসের প্যাকেটটি নিয়ে চলে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার শুনে দৌঁড়ে এসে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কুকুরটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। কুকুরটি তার ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে হাসপাতালে ভ্যাকসিন না থাকায় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে ভ্যাকসিন দিতে বলেন। পরে ক্ষতস্থানে মলম লাগানোর কথা বলে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

পৌর শহরের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, গত তিনমাস ধরে পৌরশহর এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। খাবারের জন্য কুকুরগুলো বেপরোয়া হয়ে মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই অনেক শিশু ও বড়দেরকে কামড় দিচ্ছে। বেওয়ারিশ কুকুর নিধন ও দমনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করেন।

সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. সাদেকুল করিম বলেন, গত তিনমাস ধরে কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে সাড়ে পাঁচশো জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকে স্থানীয় ক্লিনিক থেকেও চিকিৎসা নিয়েছেন বলে শুনেছি। বেশ কয়েকজন রোগীর শরীরের একাধিক স্থানে কুকুরের কামড়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে গত পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে কুকুরের কামড়ের ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যাওয়ায় আহত রোগীদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিন নিতে বলেছেন।

সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, কুকুর ও সাপের কামড়ে আহত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও টিকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে গত পাঁচ দিন ধরে কুকুরের কামড়ের টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় এক হাজার টিকা সরবরাহের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগত রোগীদেরকে আপাতত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এফএ/জেআইএম