দেশজুড়ে

৩৫ ঘণ্টায়ও খোঁজ মেলেনি ট্রলারের, শনাক্ত হয়নি ঘাতক বাল্কহেড

মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ১৩ যাত্রী নিয়ে ট্রলারডুবির ৩৫ ঘণ্টা পার হয়েছে। তবে এখনো খোঁজ মেলেনি ডুবে যাওয়া ট্রলারটির।

শনিবার (৭ অক্টোবর) দিনভর বিভিন্ন সংস্থার লোকজন নদীর কয়েক কিলোমিটার অংশে অনুসন্ধান ও ডুবুরি টিমের সাহায্যে উদ্ধার কার্যক্রম চালায়। কিন্তু কোথাও চিহ্নিত করা যায়নি ট্রলারটিকে। অন্যদিকে ট্রলারটিকে ধাক্কা দেওয়া বাল্কহেডটি শনাক্ত করা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনাস্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড এবং বিআইডব্লিউটিএর সংশ্লিষ্টরা। ঘটনার রাতে নদীতে না নামতে পারলেও সকাল থেকে নদীর তলদেশে তল্লাশি শুরু করে ডুবরি দল। এ সময় গজারিয়া ফেরিঘাটের পন্টুনে নিখোঁজদের স্বজন সহ স্থানীয় মানুষরা ভিড় করেন। নদীর পানে আকুল দৃষ্টি ছিল নিখোঁজদের স্বজনদের। যেকোনো অবস্থায় নিখোঁজদের ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান।

বিকেলে নদীতে ‘সাইড স্ক্যানার সোনার’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নদীর তলদেশে পরীক্ষা করে নৌবাহিনীর ডুবরি দল। তবে ট্রলারটি শনাক্ত হয়নি। এদিকে দিনভর অভিযান চললেও সন্ধ্যায় আলোক স্বল্পতা তৎপরতা কমে আসে। এ সময় নদীতে টহল থাকলেও ডুবুরিদলের আর কোনো কার্যক্রম ছিল না।

আরও পড়ুন: মেঘনায় ট্রলারডুবিতে মা ও সন্তানসহ নিখোঁজ ৬ 

কোস্টগার্ডের ডুবুরি মো. অপু শেখ বলেন, কোস্টগার্ড ফায়ার সার্ভিস এবং বিআইডব্লিউটিএ এর মোট তিনটি ডুবুরির টিম নদীতে তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে। নদী কোথাও ৭০ ফিট, কোথাও ৮০ ফিট কোথাও আবার কোথাও ১২০ ফিট গভীর। ড্রেজিংয়ের কারণে কোথাও গভীর খাদ। এক্ষেত্রে আমাদের উদ্ধার তৎপরতায় বেগ পেতে হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক (নারায়ণগঞ্জ অঞ্চল) মো. ওবায়দুল করিম খান বলেন, সকাল থেকে অভিযানে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার হয়। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি পাওয়া যায়নি। নদীর একটি স্থানে তেল ভাসতে দেখে যায়, সেখানে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি আছে কি না সেটির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত নৌযানটি নিশ্চিত হচ্ছি এবং নিখোঁজরা উদ্ধার হচ্ছে আমাদের অভিযান চলবে। রোববার ৬টা থেকে নদীতে আবারো অভিযান চলবে।

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নৌ নিরাপত্তা বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বাবু লাল বৈদ্য বলেন, রাতের বেলায় ঘাতক নৌযানটি চিহ্নিত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বিআইডব্লিউটিএর এত লোকবল নেই যে বিশাল নদীর মধ্যে একটি বাল্কহেড খুঁজে বের করবে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে এটি শনাক্তর চেষ্টা চলছে। আমরা নৌ-পুলিশ এবং কোস্টগার্ডকে বলে রেখেছি যেন ঘাতক নৌযানটিকে দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়।

 তিনি আরও বলেন, আমরা মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি। বাল্কহেডটি খুঁজে পেলেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করবো।

এদিকে দ্বিতীয় দিনে নিখোঁজদের মধ্যে সুমনা আক্তার (২৮) নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুপুর ১টার দিকে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা রমজানবেগ এলাকা সংলগ্ন নদী পাড় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে বিআইডব্লিউটিএর সংশ্লিষ্টরা। নিহত সুমনা গজারিয়া উপজেলার দক্ষিণ ফুলদি এলাকার মফিজুলের স্ত্রী।

তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত আর কোনো নিখোঁজের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখনো নিখোঁজ আছেন সুমনার দুই মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা (৩) ও জান্নাতুল মাওয়াসহ (৭) পাঁচজন। অপর তিনজন হলে শিশু মারোয়া আক্তার (৯) এবং তাদের আত্মীয় রংপুরের বাসিন্দা সাব্বির (৪০) ও তার ছেলে ইমাদ (২)। তাদের খোঁজে নদী তীরে রাত ৮ পর্যন্ত স্বজনদের অবস্থান করতে দেখা যায়।

শুক্রবার ছুটির দিনে স্বজনরা মিলে গজারিয়া থেকে মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জের সীমান্তবর্তী চরকিশোরগঞ্জে ট্রলারযোগে ঘুরতে যান ১২জন আত্মীয়-স্বজন। ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যায় ফেরার পথে মেঘনা নদীর মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের সীমান্তবর্তী স্থানে ঘটে দুর্ঘটনা। রাতের আঁধারে অবৈধভাবে চাঁদপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ অভিমুখে চলা বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যায় ট্রলারটি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় মফিজুল, তার খালা আকলিমা, শিশু তিনা, তাহিয়া, সাফা, যুবক রিয়াদ ও ট্রলারচালক রফিকুল সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন চার শিশুসহ ছয়জন।

আরাফাত রায়হান সাকিব/এসজে