দেশজুড়ে

৪ যুগের শতাধিক দেব-দেবীতে সাজছে পূজামণ্ডপ

অপেক্ষার পালা আর মাত্র কয়েকদিন। শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুরের প্রতিটি মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দুর্গা প্রতিমার ছাড়াও দুটি মণ্ডপে তৈরি করা হয়েছে শতাধিক দেব-দেবীর প্রতিমা। নতুন প্রজন্মের কাছে চার যুগের দেব-দেবীর সম্পর্কে তুলে ধরতে এ প্রচেষ্টা আয়োজকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার শতাধিক অস্থায়ী মণ্ডপগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রতিমার কারুকার্যের পাশাপাশি ঢেলে সাজানো হয় বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জায়। ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে জেলায় এ বছর ৯৮টি মন্দির ও মণ্ডপে উৎসব চলবে।

এরমধ্যে নড়িয়া উপজেলার পাঁচক দাসপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরে তৈরি করা হয়েছে ১২ মাসের ১৩ পার্বণের বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা। প্যান্ডেলের বাহিরে তৈরি করা হয়েছে মহাভারতের যুদ্ধের কাহিনী অবলম্বনে প্রতিমা। অন্যদিকে একই এলাকার ঘোষ বাড়ি দুর্গা মন্দিরে তৈরি করা হয়েছে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি এ চার যুগের শতাধিক প্রতিমা। দিনরাত এক করে কাজ করে চলছেন মণ্ডপ দুটির প্রতিমা শিল্পীরা। ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে রংতুলির আঁচড় ও সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

পাঁচক দাস পাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরের পাঁচজন শিল্পী নিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন ঝিনাইদহ থেকে আসা প্রধান শিল্পী গগণ শর্মা। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এ মন্দিরেই দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন তিনি। এ বছর পূজায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে তিনি মন্দিরে তৈরি করছেন দেবী দুর্গার প্রতিমাসহ শতাধিক দেব-দেবীর প্রতিমা।

আরও পড়ুন: ‘ফেনীর ১৪৭টি পূজামণ্ডপ পাহারা দেবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ’

গগণ শর্মা জাগো নিউজকে বলেন, মা দুর্গার কৃপায় পাঁচ বছর ধরে একই মন্দিরেই কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এ বছর আমি প্রতিমা, প্যান্ডেল ও বাহিরের থিমের কাজ করছি। আমি এ বছর সাবেকি মা দুর্গার অবয়বে প্রতিমা তৈরি করছি। এছাড়াও প্যান্ডেলের ভেতরে আমাদের ১২ মাসের ১৩ পার্বণের বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মন্দিরের বাহিরের থিমে আমাদের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

ঘোষ বাড়ি দুর্গা মন্দিরের প্রধান শিল্পী রাজিব সরদার বলেন, খুলনা থেকে আসা আমরা চারজন শিল্পী এ মণ্ডপটিতে ৩ মাস ধরে কাজ করছি। আমরা দুর্গা ঠাকুরের পাশাপাশি সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগের ১০০ টির বেশি দেব-দেবতার প্রতিমা তৈরি করছি। আমাদের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে আরও বেশ কিছুদিন লাগবে।

প্রতিমা শিল্পী ইমন বাছার বলেন, আমরা সকাল ৭টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করি। প্রতিমার রঙের কাজ চলছে। এরপর সাজসজ্জার কাজ শুরু করা হবে।

খুলনা ভটিঘাটা থেকে আসা অরুণ সানা নামের আরেক প্রতিমা শিল্পী বলেন, আমি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিমা বানানোর কাজ করে থাকি। এ বছর আমি শরীয়তপুরের এ মণ্ডপে ১০০ প্রতিমার কাজ করছি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শরীয়তপুর জেলার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, সবার সহযোগিতায় জেলায় ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এবছর আমাদের জেলায় ৯৮ মণ্ডপে মা দুর্গার পূজা উদযাপিত হবে। এরমধ্যে ভোজেশ্বর এলাকায় পাঁচক দাস পাড়া ও ঘোষ বাড়ি মন্দিরে পূজার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ১০০ প্রতিমার সংযোজনে চার যুগের দেব-দেবীর প্রতিমা ও দ্বাপর যুগে কুরুক্ষেত্রে সংঘটিত ধর্ম যুদ্ধের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে অধিকাংশ মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়ে রঙ তুলির কাজ চলছে। আশা করছি এ বছর এ পূজা উপলক্ষে মণ্ডপগুলোতে লক্ষাধিক ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সমাগম হবে।

বিধান মজুমদার অনি/আরএইচ/এমএস