সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ পূজা উদযাপন উপলক্ষে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এবার ১০০ কেজি চিনিগুঁড়া ধানের শৈল্পিক কারুকাজে নির্মাণ হয়েছে ১৮টি প্রতিমা। পূজা শুরুর এখনো ১০ দিন বাকি থাকলেও ধান দিয়ে নির্মাণ করা প্রতিমা দেখতে মানুষের ভিড় বেড়েই চলেছে। যেন উৎসবের আগেই উৎসবের আমেজ।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি উত্তর পালপাড়া মন্দিরে তৈরি হয়েছে প্রতিমাগুলো। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিমাগুলো মনে হচ্ছে সোনা দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। পুঁথির মত একটা একটা করে ধান দিয়ে গেঁথে তৈরি করা হয়েছে এ প্রতিমা, যা অপরূপ সৌন্দর্য বর্ধন করেছে।
প্রতিমা তৈরির কারিগর শিল্পী পল্লত বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ১৮টি প্রতিমা পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি করতে সম্পূর্ণ একমাস সময় লেগেছে। এই মণ্ডপে দুর্গা, কার্তিক গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুরসহ আনুষঙ্গিক ১৮টি প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট, নকশী কাপড়ের পাড় ও বিচুলির ফ্রেম বা কাঠামো, মাটি ও বিশেষ শৈল্পিক কারুকাজ হিসেবে ব্যয়বহুল চিনিগুঁড়া ধান ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু কিছু অংশে ব্যয়বহুল রং স্প্রে করা হয়েছে। যার কারণে প্রতিমাগুলোর আরও সৌন্দর্য বর্ধিত হয়েছে।
মুরারিকাটি পালপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য ও শিক্ষক প্রদীপ পাল জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি করা হয় এ পূজা মণ্ডপের প্রতিমাগুলো এ বছর প্রায় ১০০ কেজি চিনিগুঁড়া ধান ব্যবহার করা হয়েছে এ প্রতিমা তৈরিতে। প্রতিমা তৈরির পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হয়েছে আরও কয়েকদিন আগে এরই মধ্যে ধানের প্রতিমা দেখতে ভিড় করছেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামাপদ পাল বলেন, এবার যুব কমিটির আয়োজনে এক লাখ টাকার মতো খরচ করে ধানের প্রতিমা নির্মাণ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অচেনা মানুষের ভিড়ে মুখর হচ্ছে পূজা মণ্ডপ। পূজা শুরু হলে আমাদের যে স্বেচ্ছাসেবকরা আছে তা দিয়ে শৃঙ্খলা কতটুকু রক্ষা করা যাবে জানি না। তাই প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাই।
মণ্ডপে আসা অঞ্জলি পাল বলেন, পালপাড়ায় চল্লিশটি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবার বসবাস করেন। এবার এ দুর্গাপূজা উদযাপনে এ প্রথম এত সুন্দর প্রতিমা তৈরি করেছে যুব কমিটি যা সত্যি প্রশংসিত।
কলরোয়া পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক সন্দিপ রায় জাগো নিউজকে বলেন, ২০ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে। প্রতিমা বিসর্জন হবে ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যা রাতে। এবার কলারোয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৪৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। শারদীয়া দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি ও সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আশা করছি শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা শেষ হবে।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দুর্গাপূজা যাতে সবাই শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে উদযাপন করতে পারে এজন্য প্রতিটি মণ্ডপে বাড়তি নজরদারি রাখা হবে। মণ্ডপে আনসার, গ্রাম পুলিশসহ পুলিশের কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। যারা শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।
আহসানুর রহমান রাজীব/এসজে/এএসএম