দিনদিন কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘আলোর ফাঁদ’ এর ব্যবহার। এ আলোর ফাঁদ মূলত ফসলে পোকার উপস্থিতি যাচাই করে। এটি ক্ষেতের পাশে নিয়মিত পেতে রাখলে অনেক ক্ষতিকর পোকামাকড় আলোতে আকৃষ্ট হয়ে ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়। সিরাজগঞ্জে রোপা আমন ধানক্ষেতে এর ব্যবহার করে কৃষকরা বেশ উপকৃত হচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে ৩১টি ব্লক রয়েছে। এসব ব্লকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি রোপা আমন মৌসুমে এ উপজেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে হাইব্রিড ৬০০ হেক্টর, স্থানীয় এক হাজার ৩৮ হেক্টর ও উফসি জাতের ধান রয়েছে ১০ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমিতে।
এ বছর রোপা আমন ধানের জমিতে তেমন কোনো রোগবালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদনের প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৩১টি ব্লকেই আলোর ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকা চিহ্নিতকরণসহ তা দমনে কাজ চলছে। সপ্তাহের প্রতি রোববার স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে আলোর ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: ফসলের মাঠে আলোর ফাঁদ
শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মমিন জাগো নিউজকে বলেন, এ মৌসুমে সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এবং সারের কোনো ঘাটতি না থাকায় আমার ধানের জমিগুলোতে বেশ ভালো ফলনের আশা করছি। কিন্তু ধানের থোড় আসার সময় জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ইঁদুর আমাদের কাঁচা ধানগাছ কেটে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ সিফাত বলেন, আলোর ফাঁদ প্রযুক্তিটি কৃষকদের জন্য খুবই উপকারী একটি পদ্ধতি। আমি আমার ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি রোববার কৃষকদের নিয়ে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করি। ইচ্ছে করলে এ পদ্ধতিটি যে কোনো কৃষক নিজ উদ্যোগেও ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ফসলি জমির আশপাশে দুটি খুঁটি আড়াআড়িভাবে কাঁচির মতো করে দাঁড় করিয়ে মধ্যে একটি বাল্ব বা বাতি ঝুলিয়ে দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করতে হয় এবং বাতির নিচে পানিভর্তি একটি পাত্র রাখতে হয়। তারপর বাতির আলোর আকর্ষণে জমিতে থাকা পোকারা ছুটে আসে এবং পাত্রে রাখা পানিতে পড়ে মারা যায়। এতে ক্ষতিকর পোকা ও বন্ধু পোকার সংখ্যা চিহ্নিত হয়। সেই সঙ্গে ক্ষতিকর পোকা থাকলে তা দমনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ক্ষতিকর পোকা না থাকলে আলোর ফাঁদ ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: ফসলের পোকা দমনে ফাঁদ তৈরি করবেন যেভাবে
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনোয়ার সাদাত জাগো নিউজকে বলেন, সদর উপজেলার ৩১ ব্লকেই প্রতি রোববার আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ খুব একটা নেই। মাজরা পোকা কিছু ছিল। বৃষ্টির কারণে এবং প্রয়োজনীয় কিটনাশক প্রয়োগের ফলে তা আর নেই বললেই চলে। তবে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ রয়েছে। তা দমনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় কিটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কৃষকদের ধানের জমিতে বিলি করে দিতে, জমিতে কলাগাছের খোসা দিতে এবং ইঁদুরের গর্তের মুখে কিটনাশক ও গ্যাসের ট্যাবলেট রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, আমরা ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ইঁদুর দমন করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবো।
এম এ মালেক/জেএস/এএসএম