দেশজুড়ে

প্রতিবাদ পাঠাতে জোর করে শিক্ষিকার সই নেওয়ার অভিযোগ

নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদের বিরুদ্ধে এবার ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ডের’ ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন সহকারী শিক্ষিকা তাছলিমা বেগম। তাকে নিয়ে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ পাঠাতে জোর করে তার সই নেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) ভোরে নিজের ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

গেলো ১১ অক্টোবর শিক্ষিকা তাছলিমা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত করেন প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদ। পরে ১৬ অক্টোবর শিক্ষিকাকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে পুনর্বহাল করা হয়।

আরও পড়ুন: কোচিংয়ের বিরোধিতা করে বরখাস্ত হওয়া সেই শিক্ষিকাকে পুনর্বহাল

লাইভে তাছলিমা বেগম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ধূর্ত, প্রতারক ও ত্রাস প্রকৃতির লোক। তার কথার বাইরে গেলে কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে তিনি শান্তি দেন না। ২২ মে তিনি আমাকে অনৈতিক কথা বলেন আমি এর প্রতিবাদ করি। এরপর থেকে বিভিন্ন অজুহাতে তিনি আমার চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন। ১১ অক্টোবর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরদিন এ নিয়ে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামিমা আক্তারের সুপারিশে সোমবার আমাকে আবার পুনর্বহাল করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে আমাকে ক্লাস থেকে নিজের কক্ষে ডেকে নেনে প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদ। এ সময় তিনি ও তার লোকজন আমাকে জিম্মি করে পড়তে না দিয়ে কম্পিউটারে লেখা একটি কাগজে জোরপূর্বক সই নেন। পরে জানতে পারি ওই কাগজটি ছিল জাগো নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ। বিষয়টি জানতে পেরে সংবাদের সত্যতা স্বীকার করে রাতে পাল্টা লিখিত বক্তব্য পাঠাই। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক ও তার লোকজন আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় ভয়ে আমি এলাকা ত্যাগ করি।’

১৫ মিনিটের লাইভে তছলিমা অভিযোগ করে বলেন, ‘নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকদের জিম্মি করে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদ। তিনি সরকার নিষিদ্ধ কোচিং বাণিজ্য, প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎসহ নানা ধরনের অনিয়ম করে আসছেন। কোচিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হলেও এর ৪০০ টাকাই নিয়ে যান প্রধান শিক্ষক। তার কথার বাইরে গেলে শিক্ষকদের হয়রানি ও শিক্ষার্থীদের ক্লাসের হাজিরা বন্ধ করে দেন। এছাড়া নারী কর্মচারীদের তার স্বপ্নচুড়ার বাসায় নিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করান প্রধান শিক্ষক।’

আরও পড়ুন: কোচিংয়ের বিরোধিতা করায় স্কুলশিক্ষিকা বরখাস্ত

তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের মানসিক নির্যাতনে আমি এতটাই বিপর্যস্ত যে সুইসাইড নোট লিখে বার বার আত্মহত্যার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার চারটি বাচ্চার কথা চিন্তা করে সে পথ থেকে ফিরে আসি। আমি সত্য কথা সবার কাছে তুলে ধরলাম। আমি চাই সঠিক তদন্ত করে এসব অনিয়মের বিচার হোক। একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাক। এখন পরিবারসহ আমার নিরাপত্তা চাই।’

এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মাহমুদ রিয়াদ জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষিকার অভিযোগ সত্য নয়। তবে সরকারি নীতিমালা মেনে বিদ্যালয়ে কোচিং করানো হয়। প্রতিবাদপত্রে তিনি নিজেই স্বাক্ষর দিয়েছেন। এরপরও বিষয়টির জন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাই।’

সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষিকার ফেসবুক লাইভটি দেখেছি। শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১২ অক্টোবর জাগোনিউজ২৪.কম-এ ‘কোচিংয়ের বিরোধিতা করায় স্কুলশিক্ষিকা বরখাস্ত’ এবং ১৬ অক্টোবর ‘কোচিংয়ের বিরোধিতা করে বরখাস্ত হওয়া সেই শিক্ষিকাকে পুনর্বহাল’ শীর্ষক দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

ইকবাল হোসেন মজনু/এসজে/এমএস