আমাদের পৃথিবীর ৪ ভাগের ৩ ভাগ জল আর ১ ভাগ স্থল। যথাযথভাবে বললে শতকরা ৭৯ ভাগ পানি এবং ২১ ভাগ স্থল। আর এই ৭৯ ভাগ পানির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নাম না জানা অসংখ্য সামুদ্রিক প্রাণী। যাদের আবিষ্কার এখনো বিজ্ঞানীরা করতে পারেনি। আবার এমন কিছু প্রাণী রয়েছে যাদের দেখতে পাওয়া খুবই ভাগ্যের বিষয়। এমনি একটি সামুদ্রিক প্রাণী কম্বল অক্টোপাস।
কম্বল অক্টোপাস একটি সামুদ্রিক প্রাণী। স্ত্রী কম্বল অক্টোপাসের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ মিটার পর্যন্ত বাড়লেও বিপরীতে পুরুষ কম্বল অক্টোপাসের দৈর্ঘ্য ২.৪ সেমি পর্যন্ত দেখতে পাওয়া গেছে।
কম্বল অক্টোপাস মূলত উপক্রান্তীয় ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় সাগর-মহাসাগরের প্রাণী। সমুদ্রের তলদেশে প্রবাল প্রাচীরের মাঝে এরা থাকতে পছন্দ করে। যাযাবর প্রাণী হওয়ায় প্রতি দুদিন অন্তর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। এই সুন্দর প্রাণীরা বিভিন্ন স্থানের পানির তাপমাত্রার সঙ্গে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
আরও পড়ুন: আগ্নেয়গিরি থেকে যে দ্বীপের সৃষ্টি
কম্বল অক্টোপাস মাংসাশী তাই এদের খাদ্যে বেশিরভাগই ছোট মাছ থাকে। এই অক্টোপাসের শিকার কৌশলও বেশ সৃজনশীল। শিকারকে আকৃষ্ট করতে জেলিফিশের সাহায্য নেয় এই প্রাণী।
অন্যান্য অক্টোপাস যেমন তাদের বুদ্ধিমত্তার জন্য সুপরিচিত তেমনি কম্বল অক্টোপাস এর ব্যতিক্রম নয়। এরা শিখতে পছন্দ করে। পাশাপাশি এদের স্মৃতিশক্তি প্রখর। তাই অন্যান্য অক্টোপাস দ্বারা প্রদর্শিত আচরণ সহজেই অনুকরণ করতে পারে। সেইসঙ্গে কোনো কিছু পছন্দ হলে তার প্রতিক্রিয়াও জানাতে পারে।
হাইড্রোস্ট্যাটিক নামক অঙ্গের সাহায্যে অক্টোপাস পানির উপরের দিকে ভাসমান বা ডুবে না গিয়ে গভীরতা বজায় রাখে। যার দরুণ কম্বল অক্টোপাস তাদের ৩-৫ বছরের জীবদ্দশায় খোলা সমুদ্রে ভেসে কাটায়। সাঁতার কাটলেও ক্লান্ত হয় না। তবে যখনি বিপদের সম্মুখীন হয় সাতরে গভীর জলে চলে যায়। প্রয়োজনে দ্রুত যাত্রার জন্য কম্বলের মতো দেখতে অংশটুকু বাহুর নিচে ভাঁজ করে নেয়। আবার মাঝে মাঝে তারা কম্বলের মতো দেখতে কিছু অংশ পৃথক করে পালিয়ে যায়। সাধারণত শিকারীকে বিভ্রান্ত করতে কম্বল অক্টোপাস এটি করে।
আরও পড়ুন: বিড়ালের জনপ্রিয় ৪ জাত
পুরুষ কম্বল অক্টোপাস জীবনে একবারই স্ত্রী কম্বল অক্টোপাসকে কাছে পায়। তারপর পুরুষ কম্বল অক্টোপাস মারা যায়। এরপর স্ত্রী কম্বল অক্টোপাস বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত ১ লাখের বেশি ডিম নিজের সঙ্গে বহন করে। ধীরে ধীরে সেও মারা যায়।
গভীর সমুদ্রের প্রবাল প্রাচীর কম্বল অক্টোপাসের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি। প্রবাল যত বেশি হবে কম্বল অক্টোপাসের জন্য ততো নিরাপদ। তবে নানা কারণে এটি এখন বিলুপ্তির আশঙ্কায়। কম্বল অক্টোপাসকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’ কম্বল অক্টোপাসকে লাল চিহ্নে তালিকাভুক্ত করেছে।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
কেএসকে/জেআইএম