জাতীয়

‘বাঁচার জন্য চিৎকার করছি, আর দেখছি সব মালামাল নিয়ে যাচ্ছে’

স্ত্রীকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা ফিরছিলেন মো. শাহজাহান (৫৯)। এসময় ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার পর তিনি দেখেন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। কারও হাত নেই, কারও্ পা নেই। কেউ মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।

এরমধ্যে শাহজাহান আহত হয়ে ছটফট করছিলেন, আর তাকে বাঁচানোর জন্য চাইছিলেন সাহায্য। এসময় তিনি দেখলেন কিছু লোক তাকে সাহায্য না করে উল্টো তার মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। তার হাতে থাকা মোবাইলটিও জোর করে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। শাহজাহান শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন। কিছুই করতে পারছিলেন না।

রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (নিটোর) তাকে ও তার স্ত্রী হালিমা বেগমকে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার দিন এগারোসিন্দুর গোধূলি ট্রেনের (ট) বগিতেই ছিলেন তারা।

আরও পড়ুন: ‘চোখ বন্ধ করলেই ভেসে আসছে ক্ষতবিক্ষত লাশ আর আহাজারি’

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় শাহজাহানের সঙ্গে। জানান, পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা তিনি।

শাহজাহান জানান, তার সঙ্গে ছিল কাপড়চোপড় ও তিন হাজার ২০০ টাকার মাছ। এছাড়া রসমালাই ছিল। সবই তার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, বাড়ি থেকে পুঁটি, শিং, বাইং, বাইলা, টেংরাসহ অনেক মাছ নিয়ে আসছিলাম। দেশি মুরগি ও রসমালাই নিয়ে যাচ্ছিলাম। যখন আহত অবস্থায় পড়ে ছিলাম তখন আমাদের বগিতে কিছু লোক আসে। তাদের বললাম, ভাই আমাদের বাঁচান। তারা আমাদের না বাঁচিয়ে চোখের সামনে আমার সব মালামাল নিয়ে গেলো। আমার হাতের মোবাইল সেটটি নিতে পারেনি, জোর করে ধরে রাখায়।

আরও পড়ুন: ট্রেনে মটমট শব্দ শুনে লাফিয়ে বাঁচেন নাসির-বাহারুল

শাহজাহান বলেন, ট্রেনে মাথার ওপরের দিকে মালামাল রাখার জায়গায় সবার মালামাল ছিল। ট্রেন যখন দুর্ঘটনায় পড়ে তখন সব মালামাল আমাদের গায়ের ওপরই পড়ে। ট্রেনের ছাদ ভেঙে যায়। সেখান দিয়ে অনেকে মালামাল নিয়ে যায়। এরপর কিছু লোক এসে সেই ভাঙা ছাদের জায়গা দিয়ে টেনে বের করে আমাদের।

আহত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় তার বা হাতের এক আঙুল ছিঁড়ে গেছে। হাত ভেঙে গেছে।

শাহজাহান বলেন, ট্রেনের বগি উল্টে যাওয়ার পর সবাই কাত হয়ে পরে যাই। তখন পাথরের সঙ্গে ঘষা খেতে খেতে ট্রেন যাচ্ছিল। এর সঙ্গে রেললাইনে থাকা লোহার কারণে আঘাত আরও বেশি পাই।

শাহজাহানের স্ত্রী হালিমার কপাল ফেটে গেছে এবং ডান হাত ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, আমি ধরেই নিয়েছিলাম আজকেই হয়তো শেষদিন আমাদের। আর বেঁচে ফিরতে পারবো না। একজনের ওপর আরেকজন পড়ে ছিলাম। আল্লাহ আমাদের কীভাবে যে বাঁচিয়েছেন জানি না।

আরও পড়ুন: ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনজনকে বরখাস্ত

এর আগে সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। একই সময় ভৈরব থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল যাত্রীবাহী ট্রেন এগারোসিন্ধুর। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে বগি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে একদিনেই ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।

এএএম/জেডএইচ/এএসএম