দেশজুড়ে

সাগরের মোহনায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, হুমকিতে ইলিশের প্রজনন

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ইলিশের অভয়াশ্রম আন্ধারমানিক নদীর মোহনায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে ইলিশ প্রজনন। মা ইলিশের বিচরণ নিরাপদ করার দাবি করেছেন ইলিশের আড়ৎ মালিকসহ জেলেরা।

কুয়াকাটার লেম্বুরবন সংলগ্ন মোহনা ঘুরে দেখা যায়, অভয়াশ্রম নিরাপদকরণসহ অবাধ প্রজননের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ইলিশের প্রবৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখতে নৌযানসহ সাধারণের বাণিজ্যিক ট্রলার সমুদ্র উপকূল ও মোহনায় চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। তবে সেখানে তার উল্টো চিত্র। সাগর মোহনায় ডুবোচর কেটে ড্রেজার দিয়ে দিনে-রাতে বালু উত্তোলনের কাজ চলছে।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাধিক ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কাজ চলছে। কখনো পাঁচটি আবার কখনো ৮-৯ টি ড্রেজার দিয়ে বালু কাটছে একটি মহল।

আরও পড়ুন: ড্রেজার দিয়ে বালু তোলায় ৭ লাখ টাকা জরিমানা

আলীপুর এলাকার জেলে চুন্নু মিয়া জানান, বালু কাটার ড্রেজার আসার আগে মোহনাসহ নদীতে অনেক ইলিশ পেতেন। জীবিকা চলত। এখন আর ইলিশ নাই। শুধু তাই না আমরা এখন মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি মা মাছ ছাড়বে তাই কিন্তু তারা মাটি কাটছে এতে তো সমুদ্রে কম্পনের সৃষ্টি হয়।

রফিক নামের এক জেলে বলেন, এখন প্রজননকালতো দূরের কথা কোন সময় ইলিশ নদীতে ঢুকতে পারে না। তার মতে ১০-১৫টি জাহাজ প্রতিদিন রাত-দিন বালু কাটছে। ফলে চরও নদী-সাগর মোহনায় দেবে যাচ্ছে। ইলিশের চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে।

কলাপাড়া উপজেলা মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মিয়া জানান, আন্ধারমানিকের সাগর মোহনায় বছরের অধিকাংশ সময় বালু কাটা হয়। এসব ড্রেজারের বিকট শব্দে মা ইলিশ অন্যত্র চলে যায়। মোহনা থেকে ফিরে যায় গভীর সাগর বক্ষে। প্রজননকালীন সময় অন্তত বালু কাটা যেন বন্ধ রাখা হয়।

সমুদ্রের নীল অর্থনীতি, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জাগো নিউজকে বলেন, এসময় মা ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসে ডিম ছাড়তে। ইলিশ নীরব পরিবেশ খোঁজে। কোনো ধরনের শব্দ বা কম্পন সহ্য করতে পারে না। ফলে এ সময় ড্রেজিং বন্ধ রাখা দরকার। নইলে ইলিশের বংশ বিস্তার চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা সফল করতে পটুয়াখালীতে এসে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম জানালেন, মাছের অভয়ারণ্য যে সব জায়গায় মাছ-ডিম দেয় অথবা বড় হয় সেখানে কোনো ড্রেজিং চলে এ জাতীয় তথ্য আমাদের কাছে আসলে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আসাদুজ্জামান মিরাজ/আরএইচ/এএসএম