কাজ না করলে বউ-বাচ্চাসহ না খেয়ে থাকতে হবে। তাই নিরুপায় হয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসেছি। এখানে এসে দেখি কোনো যাত্রী নাই। গাড়ি বের করতে পারছি না। গাড়ির চাকা না ঘুরাতে পারলে রাতে চুলায় আগুন জ্বলবে কীভাবে, সেই চিন্তায় আছি। অবরোধের দ্বিতীয়দিন এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের বাসচালক মো. জাহেদুল ইসলাম।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গাইবান্ধা শহরে তিনদিনের অবরোধে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের তৎপরতা দেখা না গেলেও জরুরি কাজ ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হননি। তবে চলমান অবরোধে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থানে মাঠে রয়েছে পুলিশ।
গাইবান্ধা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। যদিও অনেক পরিবহন শ্রমিক সংসারের সদস্যদের পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসে অপেক্ষায় ছিলেন যাত্রীর।
আরও পড়ুন: ঢাকা-চট্টগ্রাম ও এশিয়ান মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে বিএনপির বিক্ষোভ
বাসচালক জাহেদুল ইসলাম আরও বলেন, ছয় সদস্যের পরিবার। আমি ছাড়া আর কেউ উপার্জন করেন না। দিনে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনো রকম সংসার চলে। গাড়ি বের করার জন্য বাসস্ট্যান্ডে সকাল ৬টায় এসেছি। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও কোনো যাত্রী না থাকায় গাড়ি বের করতে পারছি না। গাড়ি না চালাতে পারলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।
শুধু জাহেদুল ইসলাম নয়, তার মতো অনেক পরিবহন শ্রমিকই গাড়ি চালানোর অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু যাত্রী না থাকায় শুয়ে-বসে অবসর সময় পার করছেন তারা।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আব্দুল ওয়াহাব মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঘরে বসে থাকলে কেউ খাবার দিয়ে যাবে না, সাপ্তাহিক কিস্তি আছে ৯০০ টাকা। পরিবারের খরচ তো আছেই। কাল সারাদিন ৩০০ টাকার ভাড়া খেটেছি। আজ সকাল থেকে খেটে ১০০ টাকা হয়েছে। অবরোধের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। লোকজন না আসলে আমাদেরও ভাড়া জুটবে না।
গাইবান্ধা বাস টার্মিনালসহ শহর ঘুরে দেখা যায়, অবরোধের দ্বিতীয়দিনে অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু আছে। শহরে দোকান-পাট খোলা থাকলেও আতঙ্ক বিরাজ করছে দোকানদারদের মধ্যে। বাসস্ট্যান্ডে সারিবদ্ধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়েছে বাস। বাস টার্মিনাল সংলগ্ন টিকিট কাউন্টারগুলোর দুয়েকটি ছাড়া সবগুলোই বন্ধ। গাইবান্ধা থেকে পলাশবাড়ি পর্যন্ত জেলার অভ্যন্তরীণ সহজ যোগাযোগের মাধ্যম সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো বেশির ভাগই বন্ধ। কম দূরত্বের যাত্রীরা অটোরিকশা, ভটভটিতে যাতায়াত করছেন।
আরও পড়ুন: ‘পেটের দায়ে বাধ্য হয়েছি বাস নিয়ে মহাসড়কে আসতে’
বাস কাউন্টারের মালিকরা জানায়, অবরোধের কারণে যাত্রীরা টিকিট কাটছেন না। এ জন্য কাউন্টার খুলে রেখে তারা অবসর সময় পার করছেন।
গাইবান্ধা কেন্দ্রীয় টার্মিনালের আলহামরা কাউন্টারের টিকিট মাস্টার মো. সাজু মিয়া বলেন, অবরোধের কারণে ভোর থেকেই গাইবান্ধার সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হচ্ছে। এরমধ্যে কিভাবে গাড়ি চলবে।
শ্যামলী (এনআর) কাউন্টারের টিকিট মাস্টার মো. যাদু সরকার বলেন, সরকার বলুক আর প্রশাসন বলুক, যাত্রী ছাড়া তো খালি গাড়ি ছাড়তে পারবো না। একটা গাড়ি চালাতে খরচ আছে। সকাল থেকে কাউন্টারে বসে আছি, একটি টিকিট বিক্রি করতে পারিনি। শুধু আমি কোনো কাউন্টার থেকেই টিকিট বিক্রি হয়নি।
গাইবান্ধা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আশরাফুল আলম বাদশা বলেন, কিছুদিন থেকে এমনিতেই গাড়ি কম চলছে। তার মধ্যে অবরোধ। যাত্রীরা ঘর থেকে বের হচ্ছে না। যাত্রী ছাড়া তো গাড়ি চলতে পারে না। অনেক শ্রমিক এসে বসে আছে। আমরা গাড়ি ছাড়ার জন্যও প্রস্তুত। কিন্তু যাত্রী ছাড়া খালি গাড়ি তো ছাড়তে পারি না। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সরকার ও বিরোধী দলকে সমঝোতায় আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: গাজীপুর সড়কে নেই বাস, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা
এদিকে গাইবান্ধা রেলস্টেশন থেকে সময় মতো ট্রেন ছেড়ে গেছে। অবরোধকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধা শহরসহ সাত উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের। অবরোধের নামে কেউ আগুন সন্ত্রাস কিংবা নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ তা কঠোর হস্তে দমন করবে।
শামীম সরকার শাহীন/জেএস/জেআইএম