ডিস ও ইন্টারনেট সেবাদাতাদের কাছে নিবন্ধন ফি ও সার্ভিস চার্জের নামে চাঁদা চেয়ে চিঠি দেন রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নেতারা। চিঠিটি প্রত্যাহারে সংগঠনটিকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। শনিবারের (১১ নভেম্বর) মধ্যে চাঁদা চেয়ে দেওয়া চিঠি প্রত্যাহারের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদাতা সংগঠনের নেতারা।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি জি এম শামসুল হুদাকে আইএসপিএবি থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়। চিঠিতে সই করেছেন সংগঠনটির সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি জাগো নিউজকে চিঠি পাঠানো এবং তাতে দেওয়া আলটিমেটামের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: উত্তরায় ডিস-ইন্টারনেট সেবার ওপর ‘অদ্ভুত’ চাঁদাবাজি
চিঠিতে বলা হয়, উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পাঠানো চিঠিতে নিবন্ধন ফি ও সার্ভিস চার্জ দেওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) আইএসপিএবি কার্যালয়ে জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে আপনাদের প্রতিনিধির উপস্থিত থাকার কথা ছিল। চিঠির মাধ্যমে আজকের জরুরি সভার বিষয়টি আপনাকে অবহিত করা হলেও সময় স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে আপনারা উপস্থিত হননি। আপনাদের প্রেরিত একটি চিঠি বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আইএসপিএবিতে পৌঁছেছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আপনার চিঠিতে উল্লেখিত সব সমস্যাকে সর্বাধিক গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে এবং সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আজকের সভায় উপস্থিত আইএসপিএবির সদস্যরা বিস্তর আলোচনা করেন। সদস্যদের আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো হলো- বিটিআরসির আইন অনুযায়ী ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কোনো সংগঠন বা সংস্থা বা সোসাইটিকে মাসিক বা বাৎসরিক চাঁদা দেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নিবন্ধন ফি ও সার্ভিস চার্জ আরোপিত চিঠি দুটি শনিবার (১১ নভেম্বর) মধ্যে লিখিতভাবে প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং তা আইএসপিএবিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
‘একইসঙ্গে আইএসপিএবিতে পাঠানো আপনাদের চিঠির বিষয়বস্তু ও সমস্যাগুলো নিরসনের জন্য ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪টায় আইএসপিএবির কার্যালয়ে জরুরি সমন্বয় সভা করা হবে। সভায় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’ বলেও উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: দেশে মোবাইল টাওয়ার থেকে ছড়ানো রেডিয়েশন মান সহনীয়
জানতে চাইলে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তাদের সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তারা আসেননি। আমরা নিজেরা বৈঠক করে তাদের চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে সময় বেঁধে দিয়েছি। সেই চিঠি আজ উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটি অফিসে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির আইনেই এমন চাঁদা দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই নিয়ম-বহির্ভূত। আমরা নিয়মের বাইরে কোনো কিছু হতে দিতে পারি না। তাদের যদি কোনো সমস্যা থাকে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিষয়ে, সেগুলো যৌক্তিক হলে আমরা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবো।’
এ প্রসঙ্গে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স ম্যানেজার খায়রুল বাসার রুমেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সোসাইটির নির্বাহী পরিষদ সভায় আলোচনা হবে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত জানাবো। এখন কিছু বলতে পারছি না।’
জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর ও ২ নভেম্বর ওই এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে নিবন্ধন ফি ও মাসিক সার্ভিস চার্জের নামে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে উত্তরা ১৩ নম্বর ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।
তাদের চিঠির তথ্যানুযায়ী, ওই এলাকায় ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলো একশো বাসায় ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগ দিলে ৫ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হবে। একশোর বেশি বাসায় সংযোগ দিলে সেই অংক হবে ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি প্রতি মাসে সার্ভিস চার্জ বাবদ প্রতি একশো সংযোগের জন্য গুনতে হবে আরও ৫ হাজার টাকা। সংযোগের সংখ্যা ২০০ পূর্ণ হলে সার্ভিস চার্জ হবে ১০ হাজার টাকা। এভাবে প্রতি একশো সংযোগ বাড়লে সার্ভিস চার্জের পরিমাণও ৫ হাজার করে বাড়বে।
আরও পড়ুন: ২০৩০ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেটের ঘাটতি হবে না: মোস্তাফা জব্বার
সোসাইটির নেতাদের দাবি, ডিস-ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সেজে অনেকে বাসা-বাড়িতে ঢুকে চুরির ঘটনাও ঘটায়। সেগুলো রুখতে নিবন্ধিতদেরই কেবল সোসাইটি এলাকায় সংযোগের কাজ করতে দিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সারাদেশে কোথাও এমন চাঁদা বা নিবন্ধনের কথা তারা জানেন না। ১৩ নম্বর সেক্টর সোসাইটি অদ্ভুত এ নিয়ম চালু করছে। বাধ্য হয়ে অনেক ব্যবসায়ী তাদের ‘অন্যায়’ আবদার মেনে আবেদন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের প্রতিষ্ঠান আইএসপিএবি সক্রিয় হয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে।
এএএইচ/এমকেআর/জেআইএম