দেশজুড়ে

সেই ক্ষত আজও কাঁদায় ২৮ স্বজন হারানো সফিজ উদ্দিনকে

দিনটি ছিল ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর। ওইদিন ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) দক্ষিণাঞ্চলে। ওই ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বাবা-মাসহ পরিবারের ২৮ সদস্যকে হারান সফিজ উদ্দিন আকন (৭৩)। পুরো পরিবারের সবাইকে হারিয়ে দীর্ঘ ৫৩ বছর তাদের সেই স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতেই পড়ে আছেন তিনি।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভার পশ্চিম কুয়াকাটা এলাকার বাসিন্দা মৃত এফরান আকনের ছেলে সফিজ উদ্দিন।

দীর্ঘ ৫৩ বছর পর রোববার (১২ নভেম্বর) ভয়াবহ সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন এ বৃদ্ধ। চোখের কোনায় পানি চলে এসে। বারবার চোখ মুছছিলেন তিনি।

সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে সফিজ উদ্দিন বলেন, ‘চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে। সঙ্গে বৃষ্টি। বাড়িতে থাকা গরু-ছাগলগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় নিতে না নিতে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়। বাড়ি থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে নিয়ে চলে যায় ঢেউ। একটি গাছের কারণে কোনোমতে প্রাণ রক্ষা পাই। ততক্ষণে আমার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। তবে শুধু আমি না, দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ পরিবারের অবস্থা ছিল একই।’

তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে বাবা ও মাকে একই স্থানে পাই। তবে জীবিত নয়, লাশ। পরে বাড়িতে এনে কবর দেই। ওইদিন আমি আমার পরিবারের ২৮ জনকে হারিয়েছি। তাদের মধ্যে বাবা-মা, বড় ভাইসহ কয়েকজনের লাশ পেলেও বাকিদের পাইনি। তাদের পানিতে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তা আজও অজানা।’

বন্যার কয়েকদিন পর ফুপাতো ভাই জলিল হাওলাদার (৯০) বেঁচে আছেন বলে নিশ্চিত হন সফিজ উদ্দিন। এরপর একত্রে বসবাস শুরু করেন দুই ভাই। তাদের বাড়ি পাশাপাশি। দুজনেরই এখন পরিবার-পরিজনে ভরপুর।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ওই ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু হয় ১০ লাখ মানুষের। ১২ নভেম্বরকে ‘উপকূল দিবস’ ঘোষণা করার দাবি দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় মানুষের।

আসাদুজ্জামান মিরাজ/এসআর/জিকেএস