মতামত

সংলাপ: কার সাথে কোন স্বার্থে!

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পাওয়া দেশটির নাম বাংলাদেশ। যে দেশের রুপকার ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার সেই স্থপতিকে রাতের আধারে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এমনকি হত্যার পর তার বিচার যেন চাওয়া না হয় সেই পথটিও রুদ্ধ করা হয়েছিলো আইনের মাধ্যমে। এরপর থেকে ২৫ বছর ক্ষমতায় ছিলো দেশ বিরোধী চক্র। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশ ফিরে পায় গণতন্ত্র।

Advertisement

২০০১ সালের পর ক্যুর মাধ্যমে নির্বাচনে হারানো হয় আওয়ামী লীগকে। আবারো জঙ্গিবাদ রাষ্ট্রে পরিচিতি পায় বাংলাদেশ। বিএনপি জামায়াতের ক্ষমতার আমলে দেশ দেখেছে সহিংসতার ভয়াল রুপ। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় হত্যার চেষ্টা করা হয় জাতির পিতার কন্যাকে। যার সরাসরি নেতৃত্বে ছিলো বিদেশে পলাতক বিএনপির প্রধান নেতা তারেক রহমান। ওই সময়ে ক্ষমতার মেয়াদ শেষের দিকে দেশে আসে ওয়ান ইলেভেনের সরকার।

ওয়ান ইলেভেন সরকারের দেয়া নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হলেন শেখ হাসিনা। যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার। এখন স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। এদিকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভিন্নতর হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে রাখতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার বিরোধী পক্ষরা। বিশেষ করে হরতাল অবরোধের মতো জ্বালাও-পোড়াও করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে বিএনপি জামায়াত দোসররা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আছেন সংলাপ নিয়ে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কার সাথে সংলাপ এমনকি কিসের সংলাপ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কার সঙ্গে সংলাপ করব। বিরোধী দল কে? সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী দলের সংজ্ঞা আছে। সংসদে যাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, তারাই প্রকৃত বিরোধী দল। এর বাইরে বিরোধীদল গণ্য হয় না, আমেরিকাতেও হয় না। তাহলে কার সঙ্গে সংলাপ করব? খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ?রাজনৈতিক সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরো বলেছেন, ‘একটা কথাই বলতে পারি, নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে।’

Advertisement

এদিকে কথিত সুশিলদের মতে চলমান রাজনৈতিক সংকট কাটাতে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না- এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জানিয়েছেন তার মনোভাবের কথা। তিনি বলেছেন, “খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ?”

“কার সাথে? হত্যাকারীর সাথে, আগুনে যে পুড়িয়ে মারে তার সাথে? যার মাঝে এতোটুকু মনুষ্যত্ব নেই। এতোটুকু দয়ামায়া নেই, যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারে।” তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর সহানুভূতি জানাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গেলে দরজা বন্ধ করে রাখা হয়।

এ বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তো গিয়েছিলাম। খালেদা জিয়ার ছেলে মারা গেল, সহানুভূতি জানাতে। গেট বন্ধ করে রাখল। আমাকে যেতে দেয়নি। “আমাকে যেভাবে অপমান করেছে, এই যারা সংলাপ সংলাপ বলছে- তাদের যদি এভাবে অপমান করে, তারা দ্বিতীয়বার যাবে নাকি?”

সংলাপে বসতে নাগরিক সমাজের প্রস্তাবের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “কিছু লোকের একটা খেলা শুরু হয়েছে। তারা চোখে দেখে না- একজন সন্ত্রাস করে যাচ্ছে। মানুষ পুড়িয়ে মারছে। এখানে আমার অপরাধ কী? দুজনকে এক করবে কেন?

Advertisement

হরতাল-অবরোধের নামে এভাবে পুড়িয়ে মানুষ মারার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “মানুষকে বাঁচার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করা- এটা কোনো রাজনীতি না, এটা একেবারে জঙ্গিবাদী কাজ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাস বন্ধের জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আশা করব, তারা (বিএনপি) এগুলো বন্ধ করবে। না করলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। এবার এমনি এমনি যেতে দেব না। নির্বাচন এভাবে তারা থামাতে পারবে না। ২০১৩ সালে পারেনি, ২০১৮ সালে পারেনি, এবারও পারবে না। নির্বাচন যথাসময়ে হবে। তারা তো চাচ্ছে এটাই (নির্বাচন বানচাল)। তারা তা পারবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণকে কষ্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না। এটা তারা ভুলে যায়।

নাগরিক সমাজের ওই সব প্রতিনিধিদের প্রতি আগে নাশকতা বন্ধের জন্য উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা এই কথা বলছে, তাদের আমি বলব- আগে যারা সন্ত্রাস করছে, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে- এরা তো জঙ্গিবাদী কাজ করছে, আগে তাদের বিরত করুক তারা।

“তাদের যদি এতোই উদ্যোগ নেওয়ার উৎসাহ থাকে, তাহলে আগে এই সব কাজ যারা করছে- তাদের বন্ধ করুক।”প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হরতাল অবরোধের নামে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যে মানুষগুলোকে হত্যা করা হলো, তাকে (পিটার হাস) প্রশ্ন (সাংবাদিকেরা) করা হলো না কেন?

যখন উপনির্বাচনে ঘটনা ঘটেছিল, হিরো আলমকে কেউ মেরেছিল। তারা সে ঘটনায় বিচার দাবি করেছিল। এখন যখন পুলিশ হত্যা করল, এতগুলো সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, তখন তার বিচার দাবি করেনি কেন? তিনি বলেন, ‘যেভাবে পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ওই খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? কিসের আলোচনা? যারা উন্নয়ন ধ্বংস করতে পারে তাদের সঙ্গে ডায়ালগ? সে বসে ডিনার খাক, সে বসে ডায়ালগ করুক। এটা আমাদের দেশ, স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে। এ কথাটা মনে থাকা উচিত। ওই খুনিদের সঙ্গে ডায়ালগ বাংলাদেশের মানুষও চাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশের মানুষ তাদের ঘৃণা করে। বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য। যেটুকু অর্জন করেছিল তারা সেটা আমরা সুযোগ করে দিয়েছিলাম, সেটা তারা হারিয়েছে।’

সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংগঠন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাছ আপনারা কোনো সহানুভূতি পেয়েছেন? কোনো বিবৃতি পেয়েছেন? কেন পাননি? তাদের জিজ্ঞাসা করেন এখন তারা চুপ কেন? তারপর মানবাধিকার সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তারা চুপ কেন? তাদের মানবিকবোধগুলো গেল কোথায়? তাদের কথা, বিবৃতি শুনি না কিসের জন্য, কী কারণে, রহস্যটা কী?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের যে সংগঠনগুলো যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, বুদ্ধির ভান্ডার খুলে ফেলেন, আজকে সে ভান্ডার বন্ধ কেন? তারা চুপ কেন? তারা কি বুদ্ধিহীন হয়ে গেছেন? সব বুদ্ধি কি চলে গেছে?’

নির্বাচন নিয়ে সংবিধান বা প্রচলিত আইনে যা আছে, তার বাইরে কোনো সংলাপ হতে পারে না। বাকস্বাধীনতা, ভিন্নমতসহ সরকারের বিভিন্ন অবস্থান তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যে কথাগুলো বলেছেন, এর প্রায় সব কটি মেনে নিয়েছি। সংবিধানের বাইরে বা প্রচলিত আইনে যা আছে, তার বাইরে কোনো সংলাপ হতে পারে না।

সংবিধান ও আইন মেনে যদি কেউ নির্বাচনে আসে, তাহলে কিন্তু আলোচনারও প্রয়োজন থাকে না। বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে দেশবাসীকে আগুন সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীদের যেভাবে শিক্ষা দিতে হয় সেই শিক্ষাটা দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেই শিক্ষাই আমরা দেব। এদের জন্য দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা হবে না।

নির্বাচন যথাসময়েই হবে, কে চোখ রাঙাল, কে বাঁকাল- তার পরোয়া আমরা করি না, কারও চোখ রাঙানিতে নির্বাচন বন্ধও হবে না। বিএনপি নির্বাচন চায় না, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা পুনরায় নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি- জামায়াতকে ঘৃণা করে। যেটুকু সুযোগ পেয়েছিল, আমরা করে দিয়েছিলাম, সেটাও তারা (বিএনপি) হারিয়েছে।

তবে সংলাপ বা আলোচনা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। অতীতে দেখা গেছে, জাতিসংঘের মধ্যস্থতাসহ বিভিন্নভাবে যেসব রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তা কোনো ফল বয়ে আনেনি। আর বিএনপির সাথে সংলাপ কোনো ফল বয়েই আনবে না। কারণ দলটি পরিচালিত হয় বিদেশ থেকে।

লেখক: যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।

এইচআর/এমএস