মতামত

নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে এগিয়ে আসুন

নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে এগিয়ে আসুন, সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন’- স্লোগানে নারী ও শিশুসহ সব জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনব্যাপী প্রচারাভিযান কর্মসূচি শুরু হলো।

Advertisement

নারী ও শিশুসহ সব জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘১৬ দিনের প্রচারণা’ জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পক্ষ। এটি ২৫ নভেম্বর শুরু হয় এবং তা ১০ ডিসেম্বর (আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস) পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়।

১৬ দিনের প্রচারণায় নারী ও শিশুদের প্রতি সমাজের যে নেতিবাচক মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তা পরিবর্তনের জন্য জনসচেতনতা বাড়ানোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়। এসব জনসচেতনামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা, বৈষম্যমূলক মনোভাব পরিবর্তন, প্রয়োজনীয় আইন ও পরিষেবা উন্নত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানানো হয় এই পক্ষে।

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো কঠোর আইন, প্রচার প্রচারণা ও উচ্চ আদালতের নানান ধরনের নির্দেশনার পরও নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না বরং দিন দিন এর মাত্রা বাগছে। আবার এই সবকিছুর জন্য নারীকেই দায়ী করছে সমাজ৷ নারীকে দায়ী করার এই মানসিকতার পেছনে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাই কাজ করছে৷

Advertisement

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার একটি নারীবান্ধব সরকার। নারীবান্ধব সব ধরনের আইন প্রণয়ন হয়েছে গত এক দশকে। কিন্তু তবুও নির্যাতনকারীদের ভয় বা হুমকি, আদালতে মামলা চালিয়ে যাওয়ার আর্থিক ও মানসিক চাপের কারণে অনেক নারী প্রায়শই আদালতের বাইরে আলোচনা মাধ্যমে মীমাংসার করেন।

বিশ্বের যেসব দেশে মানবাধিকার ও সভ্যতার মানদণ্ড অনেক উপরে, শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থনীতি, সামাজিক ন্যায়বিচারে যাদের প্রশংসনীয় অবস্থান আছে সে সব দেশেও নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।

পরিবার, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের এখনই উপযুক্ত সময়। তাই আসুন নারীকে তার সপরিচয়ে পরিচিত হতে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই।

সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ই নারীর প্রতি সহিংসতার প্রধান কারণ। এজন্য কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নাগরিকদের পারিবারিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন করতে হবে।

Advertisement

পরিবারে সঠিক শিক্ষার অভাবে নারীর প্রতি আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা জন্মে। তখন তারা যে কোনো গর্হিত অপকর্ম করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। সন্তানদের সঠিক শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে। তাদের নীতিবান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

শুধু রাষ্ট্র নয়, এ দায়িত্ব পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবাইকে নিতে হবে। সমাজের প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া নারী সহিংসতা বন্ধে শুধু সরকারের ওপর দায়িত্ব দিলেই হবে না। সবার আন্তরিক সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ ছাড়া এই ভয়াবহ ব্যাধি বন্ধ করা সম্ভব নয়।

পরিবার, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের এখনই উপযুক্ত সময়। তাই আসুন নারীকে তার সপরিচয়ে পরিচিত হতে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই।

লেখক: ব্যারিস্টার, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

এইচআর/জেআইএম/ফারুক