অর্থনীতি

অতি মুনাফার প্রবণতা পরিহার করুন

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার কমাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে অতি মুুনাফার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক কনফারেন্স হলে ব্যাংকার্স বৈঠক শেষে এই হুঁশিয়ারি করা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতনরা ছাড়াও তফলিসি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা ছিলেন। বৈঠকে গভর্নর প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে আপনাদের সক্রিয় ও নিবিড় মনোযোগ আকর্ষণ করছি। আমি আবারও বলছি, ডিসেম্বর প্রান্তিকে আপনাদের প্রধান লক্ষ্য হবে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ও হার উভয়টাই কমানো। এ লক্ষ্যে আপনারা আপনাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও দূরদর্শিতা প্রয়োগ করবেন বলে আমি আশা করছি।গভর্নর বলেন, এ বছর সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় থাকলেও ব্যাংকিং খাতে শ্রেণিকৃত ঋণ বা এনপিলের হার প্রতি প্রান্তিকেই সামান্য করে বেড়ে তৃতীয় প্রান্তিকে এসে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিষয়টি উদ্বেগজনক। সামনে বছরে শেষ প্রান্তিক ডিসেম্বর ২০১৪। তাই আপনারা এর আগেই খেলাপি ও শ্রেণিকৃত ঋণের হার কমানোর লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন এটাই আশা করছি। এজন্যে আদায়ের ওপর সর্বশক্তি প্রয়োগ করুন। তিনি বলেন, আপনাদের ধার্যকৃত চার্জ/ফি/কমিশন ইত্যাদির তালিকা গ্রাহকদের অবগতির জন্যে ওয়েবসাইট, আপনাদের শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের সহজে দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন এবং এ সংক্রান্ত হালনাগাদ তালিকা ছয় মাস পর পর বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলের জন্যে আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের কাছে বিভিন্ন দিক থেকে অভিযোগ আসছে কোনো কোনো ব্যাংক বিভিন্ন সেবার বিপরীতে মাত্রাতিরিক্ত চার্জ/ফি নিচ্ছে। গ্রাহকদের সঠিক ধারণার অভাবেও এ অভিযোগ আসতে পারে। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি লিঙ্ক তৈরি করেছি। এ সংক্রান্ত আমাদের নির্দেশনাগুলোও এখানে একীভূত করা হয়েছে। এই লিঙ্কের মাধ্যমে সরাসরি সকল ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত শিডিউল অব চার্জেস সংযুক্ত করার ব্যবস্থাও আমরা গ্রহণ করেছি। এ ব্যাপারে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। একইসঙ্গে এ বিষয়ে পরিপালন নিশ্চিত করার জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকেও আরও তৎপর হবার আহ্বান জানাচ্ছি।আতিউর রহমান বলেন, ব্যাংকের ঋণের সুদহার ধীরে ধীরে কমছে। তবে তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়। এখনও ঋণের গড় সুদহার ১২.৪৯ শতাংশ। আগের ব্যাংকার্স সভায় আমি বলেছিলাম, দেশে প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে সুলভ বিনিয়োগ আবশ্যক। তাই শিল্প ঋণের সুদহার কিভাবে যুক্তিসঙ্গত মাত্রায় আরও কমানো যায় সে বিষয়ে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে আমানতের সুদহারের চেয়ে ঋণের সুদহার অধিকমাত্রায় কমায় গত চার মাসে আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড ৫.৩১ থেকে কমে ৫.০৯ শতাংশীয় পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এখনও ২০টির মতো ব্যাংকের স্প্রেড ৫ এর ওপর রয়েছে। আপনারা এই স্প্রেড দ্রুত কমিয়ে চারের কাছাকাছি আনার জন্যে সচেষ্ট থাকবেন। সেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কম তাদের স্প্রেডও কেন এতোটা বেশি ? অতি মুনাফার এই প্রবণতা অবশ্যই রোধ করতে হবে।