খেলাধুলা

বাফুফের চ্যাম্পিয়নশিপে নেই দেশসেরা শামস-উল-হুদা একাডেমি

ঘরোয়া ফুটবলে নতুন টুর্নামেন্ট ‘বাফুফে একাডেমি চ্যাম্পিয়নশিপ।’ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাডেমিগুলোর মধ্যে বাফুফের নিবন্ধিত ১৯২ টি। এর মধ্যে ১৬৯ টি একাডেমি নিয়ে বাফুফে প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে।

Advertisement

প্রায় কোটি টাকা বাজেটের এই টুর্নামেন্টের পুরো অর্থায়নই করছে ফিফা। ১৯ ডিসেম্বর কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে অনূর্ধ্ব-১৫ এই টুর্নামেন্ট।

বাফুফের দারুণ এই উদ্যোগে একটা খামতি থেকেই যাচ্ছে। ১৬৯ দলের এই প্রতিযোগিতায় নেই দেশের আলোচিত যশোরের শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি। এক যুগ ধরে এই একাডেমি ফুটবল তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। এই একাডেমিতে তৈরি হওয়া ফুটবলাররা কেবল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেই নয়, জাতীয় দলের জার্সিতেও সুনামের সঙ্গে খেলেছেন এবং খেলছেন।

এই একাডেমি থেকে উঠে আসা মো. রিমন হোসেন ও মেহেদী হাসান রয়েলরা জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রিমন হোসেন এখন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চারবারের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়। জাতীয় বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে এই একাডেমির অনেক ফুটবলার অংশ নিয়ে আসছেন। এমন একটি একাডেমি বাফুফের নতুন টুর্নামেন্টে কেন নেই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

কার্যক্রম ও অবকাঠামোর ভিত্তিতে নিবন্ধিত একাডেমিগুলোকে এক তারকা ও দুই তারকা-এই ক্যাটাগোরিতে ভাগ করেছে বাফুফে। দুই তারকা একাডেমি আছে ১৯ টি। অবকাঠামোগত ভিত্তি ও কার্যক্রমে বলতে গেলে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা যশোরের এই একাডেমি আছে এক তারকা ক্যাটাগোরিতে। অর্থাৎ দ্বিতীয় গ্রেডে। কেন?

বাফুফেতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামস-উল-হুদা একাডেমি ক্যাটাগোরি পরিবর্তনের আবেদনই করেনি। তাদের বলা হয়েছে আবেদন করতে, তাও করছে না। যে কারণে, তিন তারকা ক্যাটাগোরির যোগ্য হয়েও একাডেমিটি রয়ে গেছে কাগজ-কলমে নিচের গ্রেডে।

দেশব্যাপি এত বড় টুর্নামেন্টে দেশের প্রতিষ্ঠিত এই একাডেমি নেই কেন? বাফুফের টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সহকারী সমন্বয়ক মাহবুব আলম পলো জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘যশোরের শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিকে এই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তারা জবাবে ‘না’ লিখে পাঠিয়েছে। মৌখিকভাবেও তাদের বলা হয়েছিল। তারা রাজি হয়নি। একাডেমির কর্মকর্তারা বলছিলেন, একাডেমি এখন বন্ধ। ছেলেরা ছুটিতে আছে। তাই এ সময়ে অংশ নেওয়া সম্ভব না।’

একই রকম কথা বলেছেন শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর ও সেক্রেটারি সাবেক গোলরক্ষক মাসুদুর রহমান টনি, ‘বাফুফের টুর্নামেন্ট যেদিন শুরু হতে যাচ্ছে সেই ১৯ ডিসেম্বর শুরু হবে আমাদের নতুন ছাত্র ভর্তির ট্রায়াল। চলবে জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রথমে আমাদের ট্রায়াল হবে একাডেমিতে। কোয়ালিটি খেলোয়াড় কোটা পূরণ না হলে আমরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে স্কাউটিং করে প্রতিভা অন্বেষণ করে ছেলেদের ভর্তি করে থাকি। তাই এই সময়টায় আমাদের সবার ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই আমরা বাফুফে এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছি না।’

Advertisement

যশোরের এই ফুটবল একাডেমির নামডাক দেশব্যাপী। রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী যশোর-নড়াইল সড়ক থেকে একটু ভেতরে হামিদপুরে ৬০ বিঘা জমি কিনে এই একাডেমি তৈরি করেছেন তার শ্বশুর শামস-উল-হুদার নামে। একাডেমিতে ৬ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর বাবা ভাষা সৈনিক মুসা মিয়ার নামে।

এই একাডেমি যাত্রা শুরু করেছে ২০১১ সালের ১৪ মে। বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে একাডেমির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর ও সেক্রেটারি মাসুদুর রহমান টনি বলেছেন, ‘১২০ জন ফুটবলার নিয়ে আমাদের একাডেমি পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৪০ জন আবাসিক। বাকিরা অনাবাসিক। অনূর্ধ্ব-১০ বছরের ছেলেদের ভর্তি করা হয়। বয়স ১৬ বছর পর্যন্ত ফুটবলাররা এই একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। যারা আবাসিক ফুটবলার তাদের একাডেমির কাছাকাছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করানো হয়।’

শামস-উল-হুদা একাডেমিতে আছে আন্তর্জাতিক মাপের দুটি মাঠ। পাশে আছে আরো দুটি ছোট মাঠ। জিমন্যাসিয়াম আছে। ছেলেদের সাঁতারের জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা। ৬ তলা যে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে তা আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। তখন আবাসিক ফুটবলাররা একাডেমির ভেতরেই থাকতে পারবেন। ৪০ ফুটবলারের জন্য এখন বিকল্প হিসেবে একাডেমির বাইরে জায়গা লিজ নিয়ে আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। একাডেমি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে কর্তৃপক্ষের পরের পরিকল্পনা নিজস্ব স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করা।

স্থায়ীভাবে ৩ জন কোচ নিয়োগ দেওয়া আছে এই একাডেমিতে। একজন কোচ আছেন চুক্তিভিত্তিক। প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন কাজী মারুফ। এক যুগে এই একাডেমি থেকে বেরিয়ে আসা ফুটবলারদের সম্পর্কে প্রধান কোচ কাজী মারুফ বলেছেন, ‘আমাদের একাডেমির অনেক ফুটবলার জাতীয় দল, জাতীয় বয়সভিত্তিক দল এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ারসহ অন্যান্য লিগে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে অংশ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর অনূর্ধ্ব-১৮ লিগের সর্বশেষ আসরে এই একাডেমির ২০ খেলোয়াড় নিয়েছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ওই আসরে জামালকে চ্যাম্পিয়ন করতে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন আমাদের একাডেমির ফুটবলাররা। এর আগে আবাহনীকে বয়সভিত্তিক লিগে চ্যাম্পিয়ন করাতেও বড় ভূমিকা ছিল এই একাডেমির ফুটবলারদের।’

বাফুফের টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারাও মনে করেন, শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি তিন তারকা ক্যাটাগোরিতে থাকার মতো। কিন্তু একাডেমিটি আছে এক তারকার তালিকায়। আপনারা আবেদন না করাতে নাকি ক্যাটাগোরি পরিবর্তন হচ্ছে না?

এ বিষয়ে একাডেমির প্রধান কোচ কাজী মারুফ বলেছেন,‘এ নিয়ে একবার আমাদের ডিজিটাল প্লাটফর্মে আলোচনা হয়েছিল বাফুফের তৎকালীন টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলির সঙ্গে। তাকে বলেছিলাম আমরা দুই তারকার জন্য আবেদন করতে পারবো কিনা। তিনি বলেছিলেন, দুই তারকা কেন, তোমাদের যে অবকাঠামো তাতে তিন তারকার জন্যও আবেদন করতে পারো। আমাকে ইনভাইট করো। এসে দেখে যাবো তোমাদের একাডেমি। স্মলিকে ইনভাইট করেছিলাম। তিনি আসতে পারেননি। হয়তো ব্যস্ততার কারণে সময় করে উঠতে পারেননি। তাই একাডেমির ক্যাটাগরি আপগ্রেডের আবেদনও আর করা হয়নি।’

বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি এই একাডেমি দেশের ফুটবলের আঁতুরঘর হিসেবেই পরিচিতি লাভ করছে দিনদিন। অবকাঠামো তৈরি সম্পন্ন হলে বাফুফে চাইলে এই একাডেমিকে তাদের ট্রায়ালের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করতে পারবে। পারবে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের আবাসিক ক্যাম্প করতেও। বাফুফের সহযোগিতা পেলে যশোরের এই শামস-উল-হুদা একাডেমি জনপ্রিয় এই খেলার অন্যতম পাইপলাইন হিসেবে গড়ে উঠবে বলেই মনে করেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।

আরআই/এমএমআর/জেআইএম