শরীয়তপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন মাসুদুর রহমান। তিনি লাঙ্গল প্রতীক থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তার স্ত্রী সুফিয়া রহমান সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেনের হয়ে তিনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই পরিবার থেকে স্বামী-স্ত্রীর এমন ভিন্নধর্মী রাজনীতির ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর-১ আসন। এ আসনে রয়েছে দুটি পৌরসভা ও ২৩ ইউনিয়ন। এ আসন থেকে এবার স্বতন্ত্রসহ পাঁচ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এখানে মোট ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯০ হাজার ৪০৮ জন, নারী এক লাখ ৭২ হাজার ৯১০ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ১১ জন রয়েছে। এসব ভোটাররা ১৩৫টি ভোটকেন্দ্রের ৪৭৮টি কক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে অ্যাড. মাসুদুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির সোনালি আঁশ প্রতীক নিয়ে আবুল বাসার মাদবর, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের বটগাছ প্রতীক নিয়ে মো. আব্দুস সামাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা ঈগল পাখি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর মাসুদুর রহমান জাতীয় পার্টির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তার স্ত্রী সুফিয়া রহমান মহিলা আওয়ামী লীগে যোগ দিলে তাকে শরীয়তপুর সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ দেওয়া হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের অনুরোধে মাসুদুর রহমান আবার জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি জেলার সভাপতির পদ পান। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন শুরু করেন। তবে তার স্ত্রী সুফিয়া রহমান মহিলা আওয়ামী লীগে থেকেই রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুফিয়া রহমান প্রতিদিন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সঙ্গে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে নৌকা প্রতীকের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুফিয়া রহমান বলেন, আমার স্বামী জাতীয় পার্টি করেন। তিনি এবারের সংসদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী। আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন। আমি আমার দলীয় প্রতীকের প্রার্থী নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছি। তবে রাজনীতির বিষয়টি আমাদের সাংসারিক জীবনে কোনো প্রভাব ফেলছে না।
শরীয়তপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামিনা ইয়াছমিন বলেন, সুফিয়া রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। আমাদের সঙ্গে দলীয় প্রতীক নৌকার প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার স্বামী জাতীয় পার্টির প্রার্থী তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাসুদুর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। আমার স্ত্রী আওয়ামী লীগ করেন। আমি সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির থেকে প্রার্থী হলেও আমার পক্ষে কাজ করার জন্য স্ত্রীকে বলিনি। তিনি আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী তাই নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। এতে আমার কোনো বাঁধা বা আপত্তি নেই। রাজনীতিতে আমরা ভিন্ন মতানুসারী হলেও সাংসারিক জীবনে সুখী দম্পতি।
বিধান মজুমদার অনি/আরএইচ/এএসএম