ঋণ খেলাপের দায়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলে সুবিধায় রয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক (হাতঘড়ি)। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমসহ (ট্রাক) সাত প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
তথ্য মতে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চকরিয়া-পেকুয়ার রাজনীতি, প্রশাসন সবকিছুর নিয়ন্ত্রক ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর আলম। তবে তিনি দলীয় মনোনয়নে এমপি হন ২০১৮ সালে। এরপর থেকে চকরিয়া-পেকুয়ায় একছত্র আধিপত্য চলেছে তার। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। দলীয় বাঁধা না থাকায় স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। বর্তমান সংসদ সদস্য হিসেবে শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রচারে এগিয়ে ছিলেন এমপি জাফর। কিন্তু কল্যাণ পার্টির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামেন দলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম। এরপর থেকে বদলে যেতে থাকে ভোটের হিসেব।
নৌকা মাঠে না থাকায় জাফর বিরোধীরা একজোট হয়ে কল্যাণের সৈয়দ ইবরাহিমের পক্ষে মাঠে নামেন। জাফরের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে শান্ত চকরিয়া-পেকুয়া গঠনে ইবরাহিমকে জয়ী করতে প্রচারণা চালান তারা। পাশাপাশি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘অশালীন’ বক্তব্য দেওয়ায় জাফর আলমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ধীরে ধীরে জনসমর্থন বাড়তে থাকে ইবরাহিমের। এতে এক ধরনের কোণঠাসা হয়ে পড়েন জাফর। এমন কি ইবরাহিমের প্রচার-প্রচারণায় এমপি জাফর ও তার কয়েকটি বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন, লুটপাট, গরু চুরি, চিংড়ি ও লবণ মাঠ দখল, নিরীহদের জমি জবর-দখল, বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটাসহ ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং দুর্বৃত্তায়ণের ফিরস্তি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে ভোট চান আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। দুই উপজেলা ও একটি পৌরসভা একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে সভা ও গণসংযোগ করে অল্পদিনে ইবরাহিমের হাতঘড়ির পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়।
সংসদীয় আসনের বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে আলাপে তারা বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় আমরা পরিবর্তন চাই। ব্যক্তি কেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে সার্বজনীন কাজ করলে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজে মিশবে তেমন প্রার্থীকে আমরা ভোট দেবো। আমরা স্থানীয়-বহিরাগত বুঝি না, যিনি সংসদে গেলে এলাকার সুনাম হবে তাকেই ভোট দেবো।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, গণতন্ত্রের মূল হাতিয়ার নির্বাচন। এতে অংশ নিতেই ‘নির্বাচন বিরোধী বিএনপি জোট’ থেকে বেরিয়ে এসে কক্সবাজার-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। মাঠে নেমেই এলাকার নিপীড়িত মানুষের আহাজারি শুনে হতবাক হয়েছি। এলাকার লোকজন এসে বলছেন, বর্তমান এমপি জাফরের লোকজন তাদের চিংড়ি ঘের, জমি, মার্কেটসহ মূল্যবান সব দখলে নিয়েছেন। এমপির হস্তক্ষেপে পুলিশ দখলবাজ আর গরু চোরদের বিরুদ্ধে মামলাও নিতে পারেনি। এসব থেকে জনগণকে মুক্ত করতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মানুষ আমার প্রতি আস্থাশীল হয়ে হাতঘড়িতে ভোট দেয়ার ওয়াদা করেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম বলেন, চারদলীয় জোট আমলে আমি নির্যাতিত আওয়ামী লীগ কর্মী। দল ক্ষমতায় আসার পর চকরিয়া-পেকুয়ায় যে উন্নয়ন করেছি তার মূল্যায়ন আমি অবশ্যই পাবো। দলের সুবিধাভোগীরা আমার বিরুদ্ধাচরণ করছে। সাধারণ জনতা আমার ভরসা। তারা সুষ্ঠু মতো ভোট দিতে পারলে, জয় আমার ট্রাক মার্কারই হবে। আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ তা সত্য নয়।
এ আসনে জাফর-ইবরাহিম ছাড়া জাতীয় পার্টির হোসনে আরা (লাঙ্গল) ও ওয়ার্কার্স পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), ইসলামী ফ্রন্টের বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী কমরউদ্দিন আরমান (কলারছড়ি) ও এমপি জাফরে ছেলে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন (ঈগল) প্রার্থিতায় রয়েছেন।
সায়ীদ আলমগীর/আরএইচ/জেআইএম