গত কয়েকদিনের ঘন কুয়াশা, হিমশীতল বাতাস আর হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে নীলফামারীর জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। রাত থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। ছয়দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত আচ্ছন্ন থাকায় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। আকাশপথেও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
শনিবার (১৩ জানয়ারি) সকাল ৯টায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বর্তমানে সৈয়দপুরের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আজ সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরকম তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন থাকবে। সৈয়দপুরের আকাশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। এই ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে।
এদিকে রাত ও দিনে তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের চেয়ে রাতে অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষদের। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুক্ষেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে গরু-ছাগল।
শনিবার সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর পড়া কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথগুলো। গাছের পাতা, ফসলের ক্ষেত আর ঘাসের ওপর টপটপ করে পড়ছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো চলে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছোটেন কাজের সন্ধানে।
চওড়া বড়গাছা এলাকার দিনমজুর মিঠুন রায় জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকদিন ধরে যে ঠান্ডা, এই ঠান্ডায় কাজ করা খুব কষ্টের। তবুওতো কাজ করা লাগে। কাজ না করলেতো পেটে খাবার যাবে না।
দিনমজুর পরিতোষ রায় জাগো নিউজকে বলেন, ঠান্ডার কারণে কেউ ঘর থেকে বের হয় না। আমাদের মতো দিনমজুর মানুষের বাড়িতে কাজ না করলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
বাদিয়ার মোড় এলাকার অটোচালক আব্দুল মোতালেব জাগো নিউজকে বলেন, পেটে খাই যেহেতু, তাই এতো ঠান্ডায় গাড়ি চালাচ্ছি। শীতের কারণে যাত্রী বের হচ্ছে কম। ঠান্ডার কারণে সবার সমস্যা হচ্ছে।
বাসচালক মতিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এছাড়াও দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ি ধীরে ধীরে চালাতে গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বেড়েছে।
নীলফামারী জেনারেল সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স মনিরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ১০টি, সেখানে ভর্তি রয়েছে ৫০ জন শিশু। এখানে প্রতিদিন ৫০ জনের বেশি শিশু চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছে। ঠান্ডাজনিত কারণে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
এফএ/এমএস