দেশজুড়ে

‘কিস্তিআলারা তো ঠান্ডা বুঝবের নয়’

কনকনে হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু উত্তরের জেলা গাইবান্ধার মানুষ। কয়েকদিন ধরেই এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১-১৩ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পৌষের শুরুতে সকাল-সন্ধ্যায় হালকা কুয়াশা, দুপুরে কড়া রোদ, কখনো একটু-আধটু হিমেল হাওয়া থাকলেও মধ্য পৌষ থেকে বদলে যেতে শুরু করে দৃশ্যপট। ‘বাঘ পালানো’ শীত নিয়ে হাজির হয় মাঘ।

জেলার চরাঞ্চলগুলোতে প্রবল ঠান্ডায় নাজেহাল প্রায় সব মানুষ। কুয়াশার চাদরে ঢেকেছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার চর-দ্বীপচরগুলো। চরের সব জায়গায় বিকেল থেকেই ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করে। কুয়াশার দাপট এতটাই যে কিছুটা দূরের জিনিসও দৃশ্যমান হয় না। ফলে নৌ-যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে নদী কেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা।

এদিকে শহর-গ্রামের রাস্তা ও মহাসড়কে চলালচল করা গাড়িগুলোর বেশিরভাগই লাইট জ্বেলে ধীরগতিতে চলছে। শীতে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তাঘাটে সেভাবে কাউকে বের হতে দেখা যাচ্ছে না। আবার অনেককেই গোল হয়ে কাগজ-খড়কুটো পুড়িয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে।

শীতে নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট সীমাহীন হলেও হাসি ফুটেছে গরম কাপড়ের ব্যবসায়ীদের। স্টেশন রোডের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত সাত দিন থেকে শীত বাড়ায় শীতের কাপড় বিক্রি বেড়েছে। সেই সঙ্গে দামও কিছুটা বেড়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামে তীব্র শীতের মাঝেই কৃষিজমিতে দিনমজুরের কাজ করছিলেন জামিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্যাটোত খিদে থাকলে কিসের শীত, কিসের গরম। একদিন কাম না করলে হামার প্যাটোত ভাত যাবার নয়।'

একই এলাকার মালা বেওয়া বলেন, ‘কয়দিন থাকি যে শীত পচ্ছে, এই শীতত জমিত যায়া কামও করা যায় না। হামরা চরের মানুষ খুব কষ্টে আছি। সোগ জাগাতে সরকার থাকি বলে কম্বল দেয়, হামারে চরোত কেউ কম্বল দেয় না।’

তীব্র শীতে গাইবান্ধা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে ছিলেন আব্দুল ওয়াহাব। তিনি বলেন, ‘হাড়কাঁপানো শীতোত মানুষ বাড়ি থাকি বারায়ে না। কয়দিন যাত্রী গাড়িত ওঠে না। কিস্তিআলারা তো ঠান্ডা বুজবের নয়, তাই ঠান্ডাত অটোখেন নিয়ে বের হছি। দিনশেষে যদি কয়টা ট্যাকা কামাই হয়।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, সরকারিভাবে যে কম্বল পাওয়া গেছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। মাত্র ৭ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি, এসব কম্বল এরইমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে বিতরণের জন্য বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিনই গাইবান্ধার তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। আজ ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত-ত্রাণ) জুয়েল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষদের জন্য জেলার সাত উপজেলায় ৪৫ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে কম্বলগুলো ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ শুরু করা হয়েছে।

শামীম সরকার শাহীন/এফএ/এএসএম