বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দু‘দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে আরোপ করা কাউন্টার ভেলিং ডিউটি (সিবিডি) তুলে নেওয়া প্রয়োজন। ভরতের নর্থ-ইস্ট রিজিওনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ এ অঞ্চলে তুলনামূলক কম দামে, ভালো মানের পণ্য রফতানি করতে সক্ষম। টেরিফ ও নন-টেরিফ বাধাগুলো দূর করা হলে ভারতের এ অঞ্চলে বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি অনেক বাড়বে। বৃহস্পতিবার ভারতের মনিপুর রাজ্যের ইম্ফল-এ ইন্ডিয়ান চেম্বান অফ কমার্স, ভারতের মিনিষ্ট্রি অফ ডেভেলপমেন্ট অফ নর্থ ইস্টার্ন রিজিওন ও মনিপুর রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় আয়োজিত তিন দিনব্যাপী নর্থইস্ট বিজনেস সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সম্পর্ক খুবই ভালো। দু‘দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভারত সরকার অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য ছাড়া বাংলাদেশকে সকল পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ডিউটি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করেছে। টেরিফ ও নন টেরিফ বাধাগুলোর কারণে বাংলাদেশ এ বাণিজ্য সুবিধা কাজে লাগাতে পারছে না। বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান এবং নেপাল সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তা কার্যকর হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হবে এবং পণ্যবাহী গাড়ি সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। তখন এ অঞ্চলের ৮টি রাজ্যে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য আরো বৃদ্ধি পাবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্যহাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আজ তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। ২০২১ সালে বাংলাদেশের রফতানি দাঁড়াবে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ এখন আর শুধু তৈরি পোশাক রফতানির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে এখন বাংলাদেশ আইসিটি, ফার্নিচার, জাহাজ, চামড়াজাত পণ্য রফতানি করছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষতায়ন, নারী ও শিশুর মৃত্যুহার হ্রাসে অনেক এগিয়ে আছে।তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিশ্ব রফতানি বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অনেক ভালো। বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। বিশ্বের উন্নতদেশসহ ১০৭টি দেশে এখন বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করছে। বিগত ডব্লিউটিও মিনিস্টিরিয়াল কনফারেন্সে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো উন্নত বিশ্বের কাছে ওষুধ রফতানির ক্ষেত্রে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত সুবিধা অর্জন করেছে। ডব্লিউটিও-এর মহাপরিচালক বাংলাদেশের ওষুধ কারাখানা পরিদর্শন করে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।বুধবার স্থানীয় হোটেলে সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মনিপুর রাজ্যের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী গোভিনদাস কনথোজাম-এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যবৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য মনিপুর রাজ্যের চেম্বারের সঙ্গে এফবিসিসিআই-এর এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। মনিপুর রাজ্যের ব্যবসায়ীগণ বাংলাদেশ থেকে মাছ, তৈরি পোশাকসহ অনেক পণ্য আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাতলুব আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।ভারতের মনিপুর রাজ্যের লোকসভার স্পিকার তাকচম লোকেসওয়ার সিংহা এর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মনিপুর রাজ্যের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী গোভিনদাস কনথোজাম, ভারতের মিনিস্ট্রি অফ ডেভেলপমেন্ট অফ নর্থ ইস্টার্ন রিজিওন-এর সেক্রেটারি সাভেন ভারমা, মেঘালয় রাজ্যের চিফ সেক্রেটারি কে এস ক্রোফা, ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট শিভ সিধহান্দ কাউল। এ সময় ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ব্রুনাই দারুস সালামের রাষ্ট্রদূতগণ উপস্থিত ছিলেন। এসএ/একে/এবিএস