শরীয়তপুরে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ না লেখায় এক নারী চিকিৎসক ও তার পরিবার হামলার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে বাড়ি ফেরার পথে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন দক্ষিণ ডামুড্যা এলাকার দুলাল মাদবরের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক জুলহাস মাদবর এবং সদর উপজেলার বাইশরশি এলাকার মোশারফ মৃধার ছেলে ও ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশন অফিসার শহিদুল ইসলাম মৃধা।
এর আগেও বেশ কয়েকবার জুলহাস মাদবরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা ও এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়।
পুলিশ জানায়, ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন নুসরাত তারিন তন্বীর সঙ্গে কিছুদিন আগে ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ কোম্পানির শহিদুল ইসলাম মৃধার পছন্দের ওষুধ লেখা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত। বিষয়টি নিয়ে শহিদুল তার মামা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জুলহাস মাদবরকে জানান।
বুধবার রাতে ডামুড্যা বাজারের আলী আজম জেনারেল হাসপাতাল থেকে এক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া শেষে বাড়ি ফিরছিলেন নুসরাত। বাড়ির কাছাকাছি এলে তার ওপর হামলা চালান জুলহাস মাদবর ও তার ছেলে ডামুড্যা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি লিখন মাদবর, শহিদুল ইসলাম ও বেশ কয়েকজন।
এসময় নুসরাতের চিৎকারে বাড়ি থেকে তার মা মাসুমা খাতুন ও স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জন মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাদের ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নুসরাত তারিন তন্বীর স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ডামুড্যা থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
ভুক্তভোগী নুসরাত তারিন তন্বী জাগো নিউজকে বলেন, ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম বার বার তার কোম্পানির ওষুধ লিখতে আমাকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। আমি অস্বীকৃতি জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে স্থানীয় জুলহাস মাদবর, তার ছেলে লিখন মাদবরসহ বেশ কয়েকজন লোক নিয়ে আমার ওপর হামলা চালান। তারা ধাতব পদার্থ দিয়ে আমার মুখে আঘাত করলে আমি জখম হই। চিৎকার শুনে আমার মা আর স্বামী আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা সরকারি চাকরি করতে গিয়ে গ্রামে সেবা দিতে আসছি। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এমন বর্বরোচিত হামলা আমাদের সেবাদানে ব্যাঘাত ঘটাবে।
নুসরাতের স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ওরা চাচ্ছিল ওদের কিছু মানহীন ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে। কিন্তু একজন চিকিৎসক হিসেবে সব কোম্পানির ওষুধ ঢালাওভাবে লেখার সুযোগ নেই। তাই আমার স্ত্রী তাদের কথায় রাজি হয়নি। তারা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কালরাতে আমার স্ত্রীসহ আমাদের ওপর হামলা চালান।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসাসেবা দিতে গ্রামেগঞ্জে চিকিৎসকরা কাজ করেন। এভাবে তাদের ওপর হামলা হলে কেউ আর চিকিৎসাসেবা দিতে এখানে আসবে না। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
আহত মাসুমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, আমি আমার মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে এগিয়ে যাই। পরে গিয়ে দেখি আমার মেয়েকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে। আমি বাঁচাতে গেলে আমাকেও মারধর করা হয়। একজন নারী চিকিৎসক এখানে নিরাপদ নয়। আমরা কীভাবে থাকবো। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জুলহাস মাদবরের মামাতো ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এনামুল হক ইমরান জাগো নিউজকে বলেন, আমার ভাই কারও ওপর হামলা চালায়নি। জুলহাস ভাইয়ের সঙ্গে চিকিৎসক ও তার মায়ের ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পড়ে গিয়ে উনি আহত হয়েছেন।
এবিষয়ে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, ল্যাবএইড ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহীদ ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক তন্বী ও তার পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তন্বীর মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, একটি কোম্পানির ওষুধ না লেখা নিয়ে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসক তার স্বামী ও মায়ের ওপর হামলার ঘটনার খবর পেয়েছি। পুলিশ আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে দ্রুত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
বিধান মজুমদার অনি/এনআইবি/জিকেএস