ক্যাম্পাসে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে সরব ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। এরই মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ নামে নতুন প্লাটফর্মের ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্লাটফর্মের ব্যানারে মঙ্গলবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হবে।
অপরদিকে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার পাদদেশে পোস্টারিং কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে তাদের এ কর্মসূচি।
একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা হয়ে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে যায়। হলটির সামনে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। পরে নতুন কলা ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, অপরাধীকে ছাড় দেয় না জাহাঙ্গীরনগর। কুখ্যাত মানিক যেমন ছাড় পায়নি, তেমনি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত অপরাধীরাও ছাড় পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার আগেও বহু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। আমরা ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ এর আগের নিপীড়নের অমীমাংসিত ঘটনাগুলোর বিচার চাই।
আজকের কর্মসূচিতে শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ ভূঁইয়া, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
নতুন প্লাটফর্মের সংগঠক ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন বলেন, সব নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়তে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ হয়েছে। আগামীকাল বেলা ১১টায় কমিটি ঘোষণা করা হবে। এই মঞ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সব অন্যায়-অপকর্ম, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে কাজ করবে।
প্লাটফর্মটির সংগঠকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি অন্যায়-অপকর্ম ও নিপীড়ন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনি থেকে শুরু করে, সম্প্রতি হলের পাশের জঙ্গলে বহিরাগত নারীকে ধর্ষণের মূল কারণ এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি মূলোৎপাটন করতেই মঞ্চ গঠন করা হয়েছে।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্ত মাহমুদুর রহমান জনির বিচার যদি ঠিকমতো হতো, তাহলে ক্যাম্পাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে থেকে একের পর এক অপরাধ করে এরা পাড় পেয়ে যাচ্ছে। ফলে ধর্ষণের মতো এমন ঘটনা ঘটছে ক্যাম্পাসে। আমরা এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। এ উদ্দেশ্যে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষক জনির অপরাধ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘গড়িমসি’র অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, জনির অপরাধ তদন্তে স্ট্রাকচারার্ড কমিটি হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত কমিটি অপরাধের সত্যতা পেলেই তবে স্ট্রাকচারর্ড কমিটি হয়। এই কমিটির কাজ প্রাথমিক তদন্ত কমিটির সত্যতার ভিত্তিতে শাস্তি বিধান করা। প্রায় দুই বছর হলো স্ট্রাকচার্ড কমিটি হওয়ার। উপাচার্যের উচিত ছিল এই স্ট্রাকচার্ড কমিটির কাজ শেষ করে তার শাস্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু তিনি তা করছেন না। তাই এর পুরো দায় উপাচার্যকে নিতে হবে এবং তিনিই এককভাবে এজন্য দায়ী।
এদিকে সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ধর্ষণে জড়িত ও অভিযুক্তদের পালাতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। গ্রেফতারদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আর ভুক্তভোগী নারী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে।
এমএএইচএস/জেডএইচ/